প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ভোরে বৃষ্টি হলেও বেলা বাড়তেই কাঠফাটা রোদ। এরই মধ্যে কক্সবাজার শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে কয়েক শ শিক্ষার্থীর কোলাহলে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ওঠে খোশগল্পে, কেউ আবার ছবি তোলায়। সবারই চোখেমুখে ছিল সাফল্যের আনন্দ, স্বপ্নের উচ্ছ্বাস। তাদের জড়ো হওয়ার উপলক্ষ ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ‘জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কৃতী সংবর্ধনা ২০২৫’ অনুষ্ঠান।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’—এই স্লোগানে প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় কক্সবাজারে আজ রোববার সকাল ১০টায় শুরু হয় জিপিএ-৫ উৎসব। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের। এরপর ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা ভিড় জমাতে থাকে প্রতিষ্ঠানটিতে। প্রবেশপথে নিবন্ধন বুথ থেকে কার্ড, নাশতা ও ক্রেস্ট নিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এবার অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ৬৩৪ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে।
সকালে উৎসব প্রাঙ্গণে ঢুকতেই শিক্ষার্থীদের আড্ডা ও কোলাহল চোখে পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিল জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী নাঈমুর রহমান। সে ৮৫ কিলোমিটার দূরের কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছে। নাঈমুর রহমান বলে, ‘ভোরে বাড়ি থেকে বের হই। সকাল সাড়ে ৯টায় ভেন্যুতে আসি। পরীক্ষার পর থেকে এত খুশি আর হইনি। আমার সব মেধাবী বন্ধু এখানে এসেছে। পুরোনো বন্ধুদের পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
টেকনাফ থেকে এসেছে উম্মুল ফাতেমা। সে বলে, ‘মেধাবীদের নিয়ে মিলনমেলা প্রতিবছর হচ্ছে, এ জন্য খুব ভালো লাগছে। আমি এবারসহ দ্বিতীয়বার প্রথম আলোর জিপিএ-৫ উৎসবে এসেছি। আরেকবার এসেছিলাম ২০১৩ সালে। তখন আমার বড় বোন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।’
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস। তিনি উপস্থিত কৃতী শিক্ষার্থী, তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
আব্দুল কুদ্দুস শিক্ষার্থীদের সত্য তথ্য জানতে প্রথম আলো, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা পড়ার পরামর্শ দেন। উচ্চশিক্ষিত হয়ে দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার তাগিদ দেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কক্সবাজার জেলা বন্ধুসভার সদস্য সাউদা উম্মুল ফজল।
অনুষ্ঠানে বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. সৈয়দ করিম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরাই পারবে কক্সবাজারকে পরিবর্তন করতে। একদিন তোমরাই প্রধান অতিথির চেয়ারে বসবে। তোমাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি তোমাদের সেই আসন গড়ে দেবে, তবে জিপিএ-৫ পাওয়ার এই খুশি ধরে রাখতে হবে।’
এরপর শিক্ষার্থীরা মঞ্চে এসে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। বড় মহেশখালী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া শিবলী বলে, ‘কঠোর পরিশ্রম ছাড়া কখনো জিপিএ-৫ পাওয়া হতো না।’
কক্সবাজার শহরের ১০ বছর বয়সী চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মনীষা পাল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে কারাতেও রপ্ত করছে। ব্ল্যাক বেল্টপ্রাপ্ত ছোট্ট মেয়েটি এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ২৮টি গোল্ড মেডেল ছিনিয়ে এনেছে। অদম্য মেয়ে হিসেবে মঞ্চে এসে মনীষা বলে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পেরে সে খুশি। ভবিষ্যতে সে মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল (কারাতে) শেখাতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
মনীষার বাবা কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর উদয় শংকর পাল বলেন, সমুদ্রসৈকতের কারণে কক্সবাজারের পরিচিতি যেমন বিশ্বব্যাপী, তেমনি মাদকের কারণে বদনামও রয়েছে। মাদকমুক্ত কক্সবাজার গড়তে তিনি কৃতী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, যুব কার্যক্রম ও ইভেন্টসের প্রধান সমন্বয়কারী মুনির হাসান, বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এম সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার উত্তরণ মডেল কলেজে অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী প্রমুখ।