উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এগিয়ে রেখেছে ডাচ্–বাংলাকে
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও ডাচ্–বাংলা ব্যাংক যেন একে অপরের পরিপূরক। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবনকে ব্যবহার করে আর্থিক সেবাগুলো আরও সহজলভ্য করেছে। যার মাধ্যমে ব্যাংকটির হাত ধরে দেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে ব্যাংকিংয়ের নানা সুবিধা। সার্বক্ষণিক নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে এটিএম বুথকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকটি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংক হিসাব খোলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন নতুন প্রজন্মের গ্রাহকেরা ব্যাংকিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, তেমনি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও আধুনিক ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসছে।
ডাচ্–বাংলা ব্যাংক প্রমাণ করেছে যে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি একসঙ্গে পথ চলতে পারে এবং এই সম্মিলিত পথচলা ব্যাংকটিকে সফল হতে সাহায্য করেছে। দেশের প্রথম মোবাইল আর্থিক সেবা ‘রকেট’ চালুর মাধ্যমে ব্যাংকটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এটি শুধু নগদ লেনদেনকে সহজ করেনি; বরং লাখো মানুষকে ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। শিক্ষাবৃত্তির জন্যও ব্যাংকটি বেশ সুপরিচিত, যা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এসব উদ্যোগের ফল হিসেবে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই ব্যাংকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। এই বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল তাৎক্ষণিক মুনাফা অর্জন নয়; বরং টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভিত তৈরি করা। দীর্ঘমেয়াদি এই পরিকল্পনা ব্যাংকটির সাফল্যে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। শুধু প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ নয়, ব্যাংকটি সুশাসনের চর্চা ও সেবার সর্বোত্তম মান বজায় রাখতেও নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। টেকসই অর্থায়নকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকটি প্রযুক্তির পাশাপাশি উপশাখা ও এজেন্টদের মাধ্যমেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পরিসরকে আরও প্রসারিত করেছে। এসব সম্মিলিত এসব উদ্যোগের ফলে ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা টেকসই ব্যাংকের তালিকায় নিজেদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
১৯৯৬ সালে দেশি–বিদেশি যৌথ উদ্যোগে যাত্রা শুরু করা ডাচ্–বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এরই মধ্যে একাধিক মাইলফলক স্থাপন করেছে। ২০০৩ সালে দেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা চালুর মাধ্যমে তারা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। এরপর এটিএম বুথকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য করেছে। ২০১১ সালে চালু হওয়া মোবাইল আর্থিক সেবা, যা এখন ‘রকেট’ নামে পরিচিত। এটি দেশের আর্থিক লেনদেনের ধারাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দেয়। রকেটের সাফল্যের পর এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায়ও ব্যাংকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখায়, যা ব্যাংকিং লেনদেনকে আরও সহজ ও সুবিধাজনক করেছে।
বর্তমানে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের রয়েছে দেশের বৃহত্তম এটিএম নেটওয়ার্ক। সারা দেশে ব্যাংকটির ৮ হাজার ৫৮৬টি এটিএম ও সিআরএম বুথ রয়েছে। এই বিশাল নেটওয়ার্ক গ্রাহকদের যেকোনো সময় টাকা তোলার সুবিধা প্রদান করে। পাশাপাশি সিআরএম যন্ত্রের মাধ্যমে গ্রাহকেরা সহজেই টাকা জমা, উত্তোলন ও পাঠাতে পারেন। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সেবা এবং বিভিন্ন ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা চালু করে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক নিজেদের একটি আধুনিক ও ডিজিটাল ব্যাংকে পরিণত করেছে।
ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিও বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ, যা করপোরেট গ্রাহক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) ও ব্যক্তি গ্রাহক সবার চাহিদা পূরণ করে। ব্যাংকটির মোট ঋণের ১৯ শতাংশ খুচরা ঋণ এবং ১৪ শতাংশ এসএমই খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, বাকিটা করপোরেট ঋণ। ২০২৪ সাল শেষে ব্যাংকটির মোট ঋণ ছিল ৪২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা এবং আমানত ছিল ৫২ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক–সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রাহকসেবাকে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। সারা দেশে ব্যাংকটির ২৪৩টি শাখা ও ৩০৭টি উপশাখা রয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট গ্রাহকসংখ্যা ৫ কোটি ৭৭ লাখ, যার মধ্যে ২ কোটি ৩৬ লাখ নারী গ্রাহক। গত বছর ব্যাংকটি ৪৭৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে ৩৬ কোটি টাকার অধিক ব্যয় করেছে, যা সমাজের প্রতি ব্যাংকটির অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
সব মিলিয়ে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের সাফল্যের মূলে রয়েছে প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ও সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, এমনটাই জানিয়েছেন ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন