ইসলামী ব্যাংক ও মাস্টারকার্ডের এসএমই ডেবিট কার্ড চালু, দিনে তোলা যাবে ৩ লাখ টাকা
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য যৌথভাবে এসএমই ডেবিট কার্ড সেবা চালু করল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও মাস্টারকার্ড। নতুন এসএমই ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে একজন গ্রাহক এটিএম থেকে দিনে তিন লাখ টাকা তুলতে পারবেন। যেখানে সাধারণ ডেবিট কার্ডে দিনে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা তোলা যায়। এ ছাড়া এসএসমই ডেভিড কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংকটির শাখা ও পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) থেকে গ্রাহক দিনে আট লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এসএমই ডেবিট কার্ড সেবা চালু করা হয়। কার্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা ও পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের পরিচালক মো. শরাফত উল্লাহ খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোশাররফ হোসেন।
এসএমই ডেবিট কার্ডের সেবা
এই ডেবিট কার্ডে ইসলামী ব্যাংকের তিন হাজারের বেশি এটিএম ও সিআরএম বুথ থেকে লেনদেন করা যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাংকের ১৫ হাজার এটিএম বুথ থেকে লেনদেন করা যাবে। এর সঙ্গে ৯ হাজারের বেশি স্থানীয় মাস্টারকার্ড পার্টনার মার্চেন্টে সারা বছর বিশেষ ছাড় ও অফার পাওয়া যাবে।
এসএমই ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ট্যাপ অ্যান্ড গো ও ই-কমার্স পেমেন্ট সুবিধা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া সেলফিন অ্যাপের মাধ্যমে সহজ এনরোলমেন্ট ও সব ব্যাংকিং সুবিধাও মিলবে এই ডেবিট কার্ডধারীদের। উদ্যোক্তারা কোনো ধরনের ফি ছাড়া এই ডেবিট কার্ড ইস্যু করতে পারবেন। তবে এই ডেবিট কার্ডের জন্য বছরে দুবার ৪০০ টাকা করে মোট ৮০০ টাকা নবায়ন ফি দিতে হবে।
আলোচনা
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় মোশাররফ হোসেন এসএমই ডেবিট কার্ডের ও ইসলামী ব্যাংকের সেবার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই কার্ডের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা সহজে টাকা উত্তোলন, জমা ও ডিজিটাল লেনদেন করতে পারবেন। সাধারণ ডেবিট কার্ডের তুলনায় এসএমই কার্ডে উত্তোলন ও লেনদেনের সীমা বেশি রাখা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ গ্রহীতার সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার এসএমই গ্রাহক রয়েছেন। ইসলামী ব্যাংক এখন পর্যন্ত এসএমই খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৭৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, শিক্ষাকে যেমন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়, তেমনি এসএমই হলো অর্থনীতির মেরুদণ্ড। শহর ও প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের সেবা দিতে মাস্টারকার্ড ও ইসলামী ব্যাংককে তাদের সেবাগুলো আরও সহজ করতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান বলেন, বড় বিনিয়োগের ঝুঁকির তুলনায় এসএমই খাতে বিনিয়োগ অনেক বেশি টেকসই। একজন উদ্যোক্তাকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ দেওয়ার তুলনায় সেই টাকা ১০০ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ভাগ করা কম ঝুঁকিপূর্ণ। এসএমই খাতে বিনিয়োগে কর্মসংস্থানও বাড়ে, আবার জিডিপিতেও অবদান রাখা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা বলেন, এসএমই ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা অনলাইনে বিজ্ঞাপন ও বিদেশে পেমেন্ট করতে পারবেন। স্টার্টআপ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকও এই খাতে আরও সক্রিয় হবে। বিশেষ করে রিফাইন্যান্স স্কিম ও বিশেষ তহবিলে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, এই কার্ডে ডুয়েল কারেন্সি সুবিধা থাকায় উদ্যোক্তারা দেশে-বিদেশে সমানভাবে লেনদেন করতে পারবেন। অনলাইন ব্যবসা, ই-কমার্স বা বিদেশি মার্কেট থেকে পণ্য আনাসহ নানা লেনদেনে এই কার্ড তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অনেক এসএমই উদ্যোক্তা এখন নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করছেন।
এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন মাস্টারকার্ডের পরিচালক সোহেল আলিম ও ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল উদ্দিন মজুমদারসহ দুই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।