ঢাকার যে রেস্তোরাঁয় নিজের খাবার নিজেকেই রান্না করে খেতে হয়
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ঢাকার রেস্তোরাঁ–সংস্কৃতি বদলে যায় দ্রুত। একসময় বাইরে খেতে গেলে ফাস্ট ফুড বা চায়নিজেই সীমাবদ্ধ ছিল মানুষের পছন্দ। পরে ঢাকায় জনপ্রিয় হলো জাপানি সুশি, মেক্সিকোর টাকোস, কোরিয়ান রামেন বা নেপালি মম।
এবার স্বাদের নতুন নাম—হটপট। চীনের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই খাবারের বিশেষত্ব হলো, এখানে খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকেই রান্না করতে হয় টেবিলের মাঝখানে রাখা ফুটন্ত স্যুপে। ফলে খাওয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় আড্ডা, আনন্দ আর ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা।
চীনে হটপট জনপ্রিয় হয়েছে প্রায় হাজার বছর আগে। শীতপ্রধান অঞ্চলে পরিবারের সবাই মিলে এক পাত্র ফুটন্ত স্যুপ ঘিরে বসে রান্না করতেন মাংস, মাছ ও সবজি।
একসঙ্গে রান্না ও খাওয়ার এই অভ্যাসই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো চীনে। ঢাকায় হটপট পাওয়া যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই, তবে আলোচনায় আসছে যেন এখন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এর আরেকটি কারণ। শহরের তরুণেরাও হটপটের এই অভিজ্ঞতা বেশ পছন্দই করছেন।
২০১৮ সালে উত্তরায় যাত্রা শুরু করে ইয়ামা হটপট অ্যান্ড গ্রিল। রেস্তোরাঁটির মালিক ও শেফ—দুজনই চীনা।
কথা হচ্ছিল ইয়ামা হটপট ও গ্রিলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবির খানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, এখানে আছে মোট সাত ধরনের স্যুপ—র্যাডিশ কর্ন, কোকোনাট, টমেটো, মাশরুম, বিফ বোন, চিকেন স্যুপ আর স্পাইসি স্যুপ। খাবারের তালিকায় আছে ডরি ফিশ, টাইগার শ্রিম্প, স্যামন, চিকেন সসেজ, বিফ স্টিক, চায়নিজ ক্যাবেজ, টফুসহ ৫০টির বেশি খাবার।
অতিথিরা নিজের পছন্দমতো স্যুপ ও উপাদান বেছে নিয়ে রান্না করতে পারেন। এখানে হটপট খেতে জনপ্রতি খরচ পড়বে প্রায় ২ হাজার ২০০ টাকা (ভ্যাট ছাড়া)। দুই বা তার বেশি অতিথি এলে থাকছে ছাড়ের ব্যবস্থা।
আবির খান জানান, এটি প্রায় বুফের মতোই ব্যবস্থা; অতিথিরা নিজের মতো করে বেছে নিতে পারেন কোন স্যুপ সঙ্গে কোন পদটি খাবেন। শুরুতে কেবল বিদেশিরাই এখানে আসতেন, কিন্তু এখন বাংলাদেশি গ্রাহকদের থেকেও সাড়া মিলছে বেশ।
২০২২ সালে গুলশানে হটপট পরিবেশন শুরু করে হান শি রেস্তোরাঁ। এখানে স্পাইসি ও নন-স্পাইসি—দুই ধরনের স্যুপের পাশাপাশি পরিবেশন করা হয় আট ধরনের সস ও ৫৫টির বেশি খাবার।
খাবারের মধ্যে রয়েছে স্যামন সাশিমি, ইয়োলোটেইল সাশিমি, কানাডিয়ান স্পট প্রন, ওয়াগিউ বিফসহ নানা আমদানি করা উপকরণ। এই রেস্তোরাঁয় হটপট খেতে জনপ্রতি খরচ পড়বে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
শিশুদের জন্য রয়েছে ১ হাজার ২৫০ টাকার আলাদা প্যাকেজ। হান শি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ হোসেন বলেন, হান শির অভিজ্ঞ চীনা শেফ প্রতিটি সস ও উপকরণের মান নিয়ন্ত্রণে সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন।
উত্তরায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে কিয়োটো বাংলাদেশ। এখানে পরিবেশিত হয় ফিউশন হটপট। এখানে পাওয়া যায় তিন ধরনের হটপট—ক্ল্যাসিক (২৭৫০ টাকা), টোকিও স্টাইল (৩৮৫০ টাকা) ও ওসাকা স্টাইল (৪১৫০ টাকা)।
প্রতিটি হটপটে সর্বোচ্চ ছয়জন বসতে পারেন একসঙ্গে। কিয়োটোর হটপটে পরিবেশিত হয় ডরি ফিশ, নরওয়ের স্যামন, টাইগার শ্রিম্প, ক্র্যাব স্টিকসহ সামুদ্রিক ও দেশি মাংস-সবজি। সঙ্গে পাওয়া যায় ডাম্পলিং, ইয়াকিতরি, কিং শ্রিম্প ইত্যাদিও।
আবার চাইলে অতিথিরা স্যুপে সেদ্ধ কিংবা ভাজা স্টেকও দিতে পারবেন। কিয়োটো বাংলাদেশের সহ-স্বত্বাধিকারী ইমাম মাহাদী হাসান বলেন, এখানে ফিউশন হটপট পরিবেশন করা হয়, যাতে চায়নিজ ঐতিহ্য আর বাংলাদেশি স্বাদ মিলেমিশে যায়।
যদিও হটপট একটি চীনা খাবার খাওয়ার পদ্ধতি, এটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় মূলত কোরিয়ায়। তাই এটিকে অনেকে কোরিয়ার বা জাপানি খাবার বলেও ভাবতে পারেন। এখানে ক্ল্যাসিক ও টোকিও হটপটে পরিবেশন করা হয় ঝালসহ এবং ঝাল ছাড়া স্যুপ, আর ওসাকা মেনুতে থাকে ঝাল ছাড়া ও বিশেষ রামেন স্যুপ, যাকে বলা হয় তানতামেন রামেন। কোরিয়া, জাপান ও চায়না থেকে আনা সস ও উপকরণ খাবারে যোগ করে বাড়তি স্বাদ।
ঢাকায় এখন হটপট শুধু খাবার নয়, হয়ে উঠেছে হটস্পট। টেবিলে বসে নিজের হাতে রান্না করা আর গরম-গরম খাওয়ার আনন্দ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি, ভিডিও আর গল্পে ভরে উঠছে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম।