প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

‘তদন্ত কমিটিরও তদন্ত করা উচিত। রিপোর্ট জমা দিয়ে কখনও খোঁজ নেয় না, যে রিপোর্ট দিল তার কোনো প্রতিফলন হয়েছে কি না দেখে না। অনেক সময় রিপোর্টও জমা দেয় না। আসলে এই তদন্ত ব্যাপারটাই একটা প্রহসন’, কথাগুলো বললেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক সাবেক পরিচালক।
বিসিবিতে কোনো ঘটনার তদন্তে যেসব কমিটি গঠন করা হয় তাদের রিপোর্টের পর কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন নজির নেই। সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফিক্সিং-কাণ্ড নিয়ে যেসব তদন্ত কমিটি হয়েছিল তারা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এবার আরও ভয়াবহ খবর হলো ফিক্সিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টও বিসিবিতে জমা দেওয়ার আগে চলে গেছে সাংবাদিকদের কাছে।
প্রতিটি বিশ্বকাপ বা বড় টুর্নামেন্টের পর ব্যর্থতা কিংবা কোনো সন্দেহজনক বিষয় থাকলে সেসব নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিসিবি। অধিকাংশ সময় নামমাত্র একটি কমিটি হয়। ২০২৩ সালে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ও ক্রিকেটার নাসুম আহমদকে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চড়-কাণ্ড নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস, এনায়েত হোসেন সিরাজদের নিয়ে গঠিত সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কিছুই পাওয়া যায়নি।
২০১৫ সালে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে টুর্নামেন্টের মাঝপথেই পেসার আল আমিন হোসেনকে বাদ দেয় দল। অথচ কেন বাদ দেওয়া হয়েছিল সেই ঘটনা বলা হয়নি।
২০১৮, ২০১৯ কিংবা তার আগে ও পরে ঢাকা লিগে আম্পায়ারদের ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের ঘটনা ঘটেছে হর হামেশা। খালি চোখেই সেটা যে কেউই বুঝতে পারতেন। অথচ তদন্ত কমিটিতে আম্পায়ারদের বিপক্ষে আনীত অভিযোগ প্রমাণই হয়নি!
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের (বিপিএল) জন্মলগ্ন থেকেই ফিক্সিংয়ের বিষাক্ত থাবা বহাল আছে। অথচ বিসিবি দুর্নীতি দমন কমিশন ও পরবর্তীতে গড়ে তোলা অন্য তদন্ত কমিটি কিছুই পায় না, যা পেয়েছিল সেটা আইসিসি।
সবশেষ বিপিএল ও ডিপিএলে খালি চোখেও অনেকে ফিক্সিংয়ের গন্ধ পেয়েছেন। গঠন করা হয়েছিল কমিটিও। কিন্তু সেই তদন্তে কারও নাম নেই। এরকম ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত কারও নাম থাকে না।
বিসিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘নাম আসবে কীভাবে? যারা করেন, যারা কমিটিতে থাকেন কিংবা করেন ঘুরে ফিরে তো সবাই এক ব্যক্তি।’
এরকম তদন্ত কমিটি নিয়ে জানতে চাইলে দীর্ঘদিনের ক্রিকেট সংগঠক, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মালিক লুৎফুর রহমান বাদল বলেন, ‘পলিসি মেকারের কাজ কখনোই কর্মচারী দিয়ে হয় না। যেখানে কোনো সুশাসন নেই, কোনো লক্ষ্য নেই, দীর্ঘ মেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই, সেখানে যাওয়ার লক্ষ্যই যদি থাকে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করা, সেখানে বাস্তব ফল পাওয়া যাবে না কখনোই। স্বার্থ নিয়ে বড় জায়গায় গেলে তো শুধু ক্ষমতারই অপব্যবহার হবে।’
আরও পড়ুন