প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মাসের পর মাস জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের সদস্যপদ স্থগিত করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সদস্য বোর্ড হিসেবে দায়িত্ব পালনে বারবার ব্যর্থতা এবং নানা অনিয়মের কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আইসিসির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক কমিটির কাছ থেকে জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার স্বীকৃতি আদায়ের কোনো অগ্রগতি নেই, বরং তাদের কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব ক্রিকেটের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের এ সংকট নতুন কিছু নয়। আর্থিক অনিশ্চয়তা, শাসনব্যবস্থায় সংস্কারের অভাব, দুর্নীতির অভিযোগ, আদালতে টানাহেঁচড়া, সব মিলিয়ে অনেকদিন ধরেই তারা অস্থিতিশীল। নির্বাচন সামনে রেখে সদস্যপদ ব্যবস্থায় কারসাজির অভিযোগও উঠেছে। অলিম্পিক কমিটির শর্ত পূরণের নামে যেসব প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, সেগুলোকেও বলা হচ্ছে উপরিতলের পদক্ষেপ।
এই অধ্যায়ের শুরু হয় ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আইসিসির বার্ষিক সভার আগে। সে সময় ইউএসএ ক্রিকেট বোর্ডের তিন পরিচালক আইসিসিকে চিঠি লিখে অভিযোগ তোলেন ‘হয়রানি’, ‘দুর্নীতি’ ও ‘অনৈতিক’ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগের তালিকায় ছিল বোর্ড সিইও ড. নূর মোরাদের বিতর্কিত বরখাস্ত, অসাংবিধানিক সংশোধনী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার আমেরিকান ক্রিকেট এন্টারপ্রাইজেস-এর সঙ্গে সমঝোতা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টাসহ নানা অনিয়ম।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে ১২ মাসের শর্তসাপেক্ষ স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়, যাতে তারা শাসনব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামো ঠিক করতে পারে। কিন্তু সে সময়কে সঙ্কট সমাধানে কাজে লাগানোর বদলে বোর্ড আরও বেশি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলাফল—পরিচালক অপসারণ, মামলা, নির্বাচন বিলম্ব এবং অলিম্পিক কমিটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে যাওয়া।
এই অস্থিরতার মাঝেই আইসিসি সভাপতি জয় শাহ অনানুষ্ঠানিকভাবে বোর্ড চেয়ারম্যান ভেনু পিসিকে এবং সিইও জনাথন অ্যাটকিসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সব পরিচালককে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। তবে পিসিকে ও তার সমর্থকরা সে নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। ফলে আইসিসি স্থগিতাদেশ আরও বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দেয়।
তবে সম্প্রতি বোর্ডের ভেতরে আবারও তথ্য গোপন, প্রার্থী যাচাই কমিটির বৈধতা নিয়ে বিতর্ক এবং অভ্যন্তরীণ সংঘাত দেখা দেয়। এ অবস্থায় আইসিসির হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে পুরোপুরি স্থগিত করা হয়।
এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন মার্কিন ক্রিকেটাররা। কয়েক মাস পরেই বিশ্বকাপ, সামনে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক। তাই আইসিসি জানিয়েছে, আপাতত জাতীয় দলের প্রশাসন সরাসরি তাদের অধীনে থাকবে।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ইউএসএ ক্রিকেট খেলোয়াড়দের বিদ্যমান চুক্তি রক্ষা করবে তো? আইসিসি ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের অর্থায়ন বন্ধ, আদালতের মামলা ও বাড়তি খরচ—সব মিলিয়ে বোর্ডের আর্থিক অবস্থা দ্রুত নাজুক হয়ে পড়ছে।
আইসিসি এখনও পুনর্বহালের রূপরেখা প্রকাশ করেনি। সম্ভাব্য পথ হচ্ছে, সাময়িকভাবে আইসিসি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের প্রশাসন চালাবে, স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দেবে এবং পরে নির্বাচন আয়োজন করবে। এর জন্য প্রয়োজন নতুন সাংবিধানিক সংস্কার, শক্তিশালী সুশাসন কাঠামো এবং বিতর্কিত ‘সফটবল লিগগুলোর ভোটাধিকার বাতিল’।
কিন্তু এর আগে শর্ত একটাই—বর্তমান বোর্ডকে সরে দাঁড়াতে হবে। তারা যদি অস্বীকার করে, তাহলে স্থগিতাদেশ থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত গড়াতে পারে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বহিষ্কারের পর নতুন সংস্থা গড়তে যে তিন বছর লেগেছিল, এবারও হয়তো দীর্ঘ সময় লাগবে।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট আবারও সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে। আর লাভবান হচ্ছেন মূলত আইনজীবীরা—কারণ ক্রিকেট সেখানে মাঠের চেয়ে আদালতেই বেশি সময় কাটাচ্ছে।
এমএইচএম
আরও পড়ুন