Advertisement

লেন্স থেকে মঞ্চে: বিনোদন অঙ্গনে আবীর সাদাফের ১০ বছর

যুগান্তর

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আবীর সাদাফ। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
আবীর সাদাফ। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

২০১৬ সালের ১৬ জুলাই। নিছক আগ্রহ থেকে ফটোগ্রাফার হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সূবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের স্টেজে উঠে আসেন আবীর সাদাফ। সেটিই আজ রূপ নিয়েছে সৃজনশীলতা ও দীক্ষার এক আজীবন যাত্রায়। এ বছরই মিডিয়ায় এক দশকে পদার্পণ করতে যাচ্ছেন আবীর। এসময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পী ও ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে।

কিংবদন্তিদের সঙ্গে পথচলা

আবীরের যাত্রা শুরু হয় যখন ওয়ারফেইজ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যান্ড লিডার শেখ মনিরুল আলম টিপু’র হাত ধরে। তাকে ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এর কিছুদিন পরই শিরোনামহীন-এর জিয়াউর রহমান জিয়ার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। যেখান থেকে শিল্প আর পেশাদারিত্বের সূক্ষ্ম ভারসাম্য শিখে নেন।

পথ খুলে যায় এলআরবি এবং কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর দিয়ে। যেটা সম্ভব হয় ব্যান্ড এলআরবি’র ম্যানেজার ও সাউন্ড ইঞ্জিন্যার শামীম আহমেদের কল্যানে। এই সূত্রেই আবীর প্রবেশ করেন এলআরবি’র ভেতরের পরিমণ্ডলে। সেখান থেকে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে। পরে শাফিন আহমেদ-এর সঙ্গেও। যাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক পেশাদারির সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল অনেক দূর।

বিগত বছরগুলোতে আবীর গর্বের সঙ্গে কাজ করেছেন অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী কিছু নাম ও ব্যান্ডের সঙ্গে— ওয়ারফেইজ, শিরোনামহীন, এলআরবি, আইয়ুব বাচ্চু এবং শাফিন আহমেদ। এই অভিজ্ঞতাগুলো শুধু তার ক্যারিয়ার নয়, তার শিল্পীসত্ত্বাকেও জাগিয়ে তুলেছে প্রতিনিয়ত।

শোক থেকে শক্তি

২০১৮ সালে আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু আবীরের জীবনে ছিল এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। ভেঙে পড়লেও, বেদনা থেকে খুঁজে নেন শক্তি। কিছুদিন সবকিছু থেকে দূরে থাকলেও একসময় প্রতিজ্ঞা করেন তার প্রিয় বস ও মেন্টরকে সম্মান জানাতে হলেও ফটোগ্রাফি চালিয়ে যাবেন। কিছু সময় পর ফটোগ্রাফির কাজ করোনাকালীন সময়ে বাধাপ্রাপ্ত হলে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার ডেপ্থে কাজ করা শুরু করেন। সেখান থেকে তার শাফিন আহমেদের সঙ্গে সক্ষতা গড়ে ওঠা যা রূপ নেয় একটা সোশ্যাল মিডিয়া এজেন্সি ব্যবসায়। ইতোমধ্যে আবীর আরও জড়িয়ে পড়েন সঙ্গীত ও অভিনয়ের সঙ্গে। পরবর্তীতে শাফিন আহমেদের মৃত্যু তার সেই অঙ্গীকারকে আরও গভীর করে তোলে। অনুপ্রাণিত করে, আরও দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে এবং তাদের অবদানকে নিজের সঙ্গীত ও কর্মের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

শিল্পী, ম্যানেজার ও সঙ্গীতশিল্পী

ফটোগ্রাফি ও ম্যানেজমেন্ট ছাড়াও আবীর নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। বর্তমানে তিনি এক্সকেপ (Xscape) ব্যান্ডের ফ্রন্টম্যান। তাঁর এক দশকের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে বহুমুখিতা — কিংবদন্তিদের ডিজিটাল উপস্থিতি গড়ে তোলা থেকে শুরু করে, নিজেকে এবং নিজস্ব ব্যান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

সম্প্রতি তিনি ভাইকিংস ব্যান্ডে ডেকহ্যান্ড/ম্যানেজার (অক্টোবর ২০২৩ – জুলাই ২০২৫) হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। এই অধ্যায় তাঁর ক্যারিয়ারকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, মিউজিক ও ম্যানেজমেন্ট — দুই ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করেছে।

একা'র গল্প

আড়াই বছর ধরে একের পর এক গান রিলিজ আটকে যাওয়ার সংগ্রামের পর— যেগুলো তিনি প্রথমে এককভাবে কাজ করেছিলেন এবং পরে ব্যান্ডে পুনর্গঠন করেন। অবশেষে ২০২৫ সালের ২৮ আগস্ট মুক্তি পায় ‘একা’। গানটি এক্সকেপের আসন্ন অ্যালবাম লুকানো ভালোবাসার খোঁজে-এর অংশ যে গান রচনা ও সুরায়োজন করেছেন গিটারিস্ট ও সঙ্গীতশিল্পী জুলিয়াস রাসেল এবং মিক্স-মাস্টার করেছেন আরেকজন প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী বে অব বেঙ্গল ব্যান্ডের বখতিয়ার হোসাইন এবং এটি চিহ্নিত করে আবীরের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আত্মপ্রকাশ একজন ভোকালিস্ট ও ফ্রন্টম্যান হিসেবে।

আবীরের অনুভূতি

‘আমি আশীর্বাদপুষ্ট। কারণ যাদের একসময় আইডল ভেবেছি, তাদের সঙ্গেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আইয়ুব বাচ্চু বস আর শাফিন আহমেদ ভাইকে হারানো আমাকে ভেঙে দিয়েছে। তবে সেটিই আমাকে শক্তি দিয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। আমার বাবা-মা, টিপু ভাই, জিয়া ভাই আর তাহসান ভাই— তাদের প্রতি আমার অন্তরের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা, যারা আমাকে আজকের আমি বানিয়েছেন।’

সামনে পথচলা

এক দশক পূর্ণ করার পর, আবীর সাদাফ ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছেন কৃতজ্ঞতা, দৃঢ়তা ও উদ্দেশ্য নিয়ে। অতীতকে সম্মান জানিয়ে আর নিজের ছাপ রেখে যেতে সংগীত ও মিডিয়ায়।

আরও পড়ুন

Lading . . .