প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী ‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন জন্মোৎসব ২০২৫’ করছে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল। আজ ১৮ আগস্ট তাঁর ৭৬ তম জন্মবার্ষিকী। ‘সেলিম আল দীন—রবীন্দ্রনাথ মোদের শিল্পে রয়, বাঙলা নাট্যের জয়যাত্রা অনন্ত-অক্ষয়’—স্লোগানে আজ সোমবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে উৎসবের পর্দা উঠবে; পর্দা নামবে আগামীকাল মঙ্গলবার।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বপ্নদল জানিয়েছে, উৎসবে হরগজ ও চিত্রাঙ্গদার বিশেষ প্রদর্শনী করবে নাট্যসংগঠনটি। প্রযোজনা দুটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যাচার্যের ছাত্র, নির্দেশক জাহিদ রিপন। এ ছাড়া স্মরণ-শোভাযাত্রা, নাট্যাচার্যের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, নাট্যাচার্যের জীবন-কর্ম-দর্শন নিয়ে আলোচনাও থাকবে।
আজ সকাল ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবন থেকে নাট্যাচার্যের সমাধি অভিমুখে স্মরণ-শোভাযাত্রা ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে সেলিম আল দীনের কালজয়ী সৃষ্টি হরগজ–এর ৪৯ তম প্রদর্শনী হবে।
১৯৮৯ সালে মানিকগঞ্জ জেলার হরগজে সংঘটিত প্রলয়ংকারী টর্নেডোর অভিজ্ঞতা নিয়ে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন হরগজ রচনা করেন। নাটকটি টর্নেডোর পর উদ্ধারকারী দলের অভিজ্ঞতা ও আকৃতির জগৎ থেকে হঠাৎ নিরাকৃতির জগতে তাদের উপস্থিতি ও পরিণতি নিয়ে আবর্তিত।
আগামীকাল সমাপনী দিন সন্ধ্যা ৭টায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রাঙ্গদার ১১৯ তম মঞ্চায়ন হবে।
‘মহাভারত’ অবলম্বনে রচিত চিত্রাঙ্গদার নাট্যকাহিনিতে মণিপুর রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা মহাবীর অর্জুনের প্রেমে উদ্বেলিত হলেও অর্জুন রূপহীন চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন। অপমানিত চিত্রাঙ্গদা প্রেমের দেবতা মদন ও যৌবনের দেবতা বসন্তের সহায়তায় এক বছরের জন্য অপরূপ সুন্দরীতে রূপান্তরিত হন। অর্জুনকে লাভ করলেও চিত্রাঙ্গদা অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হয়—অর্জুন প্রকৃতপক্ষে কাকে ভালোবাসে, চিত্রাঙ্গদার বাহ্যিক রূপ নাকি তার প্রকৃত অস্তিত্বকে? নাটকটি পৌরাণিক কাহিনির আড়ালে এ যুগের নর-নারীর মনোদৈহিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ও পারস্পরিক সম্মানাবস্থার প্রেরণা হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপিরাইটার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করলেও পরে বাকি জীবন শিক্ষকতাই করেছেন। ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং আমৃত্যু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি আতর আলীদের নীলাভ পাট, কীত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, যৈবতী কন্যার মন, বনপাংশুল, চাকা, ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল, পুত্রসহ অনেক নাটক রচনা করেছেন। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় মারা যান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
আরও পড়ুন