পরীক্ষা নয়, বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ৬৬ নম্বর পেলেই পাস করে যাবে আনিসা
প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

সময়মতো কেন্দ্রে না আসায় এইচএসসির প্রথমদিনে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনিসা আহমেদ। কাঁদতে কাঁদতে সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন, অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হয়েছিল তাকে। সেজন্য কেন্দ্রে আসতে দেরি হয়েছে। আর দেরির কারণে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি তিনি।
সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রের সামনে আনিসার ছোটাছুটি ও কান্নার সেই ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান নেটিজেনরা। তাকে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার দাবি ওঠে। সেই দাবি মেনে আনিসাকে পরীক্ষায় বসানো হবে বলে ঘোষণাও দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ড।
তবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে একই সঙ্গে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একটি কমিটি করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং আরেকটি কমিটি করা হয় আনিসার পরীক্ষা কেন্দ্র সরকারি বাঙলা কলেজের পক্ষ থেকে। দুই পক্ষের তদন্তে ঘটনা সম্পর্কে আনিসার বর্ণনা অনুযায়ী সত্যতা মেলেনি। সেজন্য আনিসাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। তবে আনিসা যদি বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় ৬৬ নম্বর পায়, তাহলে দুই পত্র মিলিয়ে তাকে পাস করিয়ে দেওয়া হবে।
রোববার (১০ আগস্ট) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই ছাত্রীর (আনিসা) পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাইয়ের কাজ করা হয়েছে। সেগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। সে পরীক্ষা না দিয়েও পাস করতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে দুই পত্র (বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) মিলিয়ে ৬৬ নম্বর পেতে হবে। তাহলে তার রেজাল্ট আসবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব ও ঢাকা বোর্ডের দুজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, মায়ের অসুস্থতা নিয়ে আনিসা যেভাবে তথ্যগুলো দিয়েছিল, তার সত্যতা মেলে না। তার মা ওই হাসপাতালের নিয়মিত রোগী। সেদিন সকালে যে হঠাৎ সেখানে ভর্তি হয়েছিল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল; এমন তথ্যেরও সত্যতা মেলেনি। এমনকি হাসপাতালে ভর্তির যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আনিসা আমাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করেনি। ঢাকা বোর্ড ও বাঙলা কলেজ যে তদন্ত কমিটি করেছিল, তারা আমাদের কাছে হাসপাতালে ভর্তির স্লিপসহ কিছু তথ্য-উপাত্ত চেয়েছিল। আমরা সেগুলো আনিসার কাছ থেকে নিয়ে কমিটিকে দিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন শিক্ষার্থী যদি ভুয়া স্লিপ এনে দেয়, তাহলেও তো আমাদের কিছু করার নেই। সেটার সত্যতা তদন্ত কমিটি যাচাই করেছে। যতদূর জেনেছি, ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় বোর্ড তার আর পরীক্ষা নিচ্ছে না। এখন যে উপায়টা আছে, তা হলো দুই পত্র মিলিয়ে ৬৬ নম্বর পেলে পাস ধরা হয়। সেক্ষেত্রে বাংলা দ্বিতীয়পত্রে আনিসা ৬৬ পেলে এবং বাকি সব বিষয়ে পাস করলে; সে পাস করে যাবে।’
এ নিয়ে পরীক্ষার্থী আনিসা আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তার ও তার পরিবারের যে দুটি মোবাইল ফোন নম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে একটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যটিতে কল হলেও তা রিসিভ হয়নি।
গত ২৬ জুন বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার মাধ্যমে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। সেদিন সব ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে আসে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে আনিসার কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্য। সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে আনিসার খালা পরিচয় দেওয়া এক নারী জানান, আনিসার বাবা মারা গেছেন। মা পরীক্ষার দিন সকালে স্ট্রোক করেছেন। পরিবারে আর কেউ না থাকায় পরীক্ষা দিতে আসার প্রস্তুতি নেওয়া আনিসা কেন্দ্রে না এসে অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। সেজন্য পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে দেরি হয়েছে।
যাচাই ছাড়াই তখন এমন তথ্য ও ছবি-ভিডিও শেয়ার করতে শুরু করেন নেটিজেনরা। সেসময় অনেকে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পর আর কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ না রাখার নিয়মের সমালোচনা করেন। অনেকে আবার মানবিক দিক বিবেচনায় আনিসার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগের দাবি জানান। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই ছাত্রী পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন