প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত
প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ে বছরের মাঝামাঝি (অর্ধবার্ষিকী) ও শেষে নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং সচিব এ কথা জানান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আমরা অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শন করছি, যেখানে কোনোদিন কেউ যায়নি। সেসব অঞ্চলে আমরা ভিজিট করছি। পরিদর্শনে যাওয়ার পর প্রত্যেকটি ক্লাসে গিয়ে আমি শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করি। এতে আমরা প্রকৃত চিত্র পাচ্ছি। সে পাস করে আসছে, কিন্তু বাংলা রিডিং পড়তে পারছে না। যে পড়তে পারে কিন্তু অর্থটা ভালো বুঝতে পারে না। আমি সেই অর্থে বলছি। প্রকৃত সাক্ষর আমি তাকেই বলবো যে তার মাতৃভাষা অনর্গল পড়তে পারে, পড়ে বুঝতে পারে এবং তার মনের ভাবটা লিখতে পারে। গাণিতিক যে সাধারণ নিয়মগুলো আছে সেগুলো সে বোঝে এবং করতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা যেটা করছি- আমরা একটা স্কেল তৈরি করেছি। কীভাবে আমরা এই বিষয়টাকে পরিমাপ করবো। এরইমধ্যে আমরা স্কুল পর্যায়ে এটা (বছরের মাঝামাঝি সময়ে মূল্যায়ন) অ্যাপ্লাই করেছি। আমরা একটা বেইজ লেভেল দেখছি, আমরা একটা প্রোগ্রাম নিচ্ছি, যেসব ছাত্ররা পিছিয়ে আছে তাদের জন্য এক্সট্রা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরা ডিসেম্বরের শেষের দিকে আবার অ্যাপ্লাই করবো। আমরা দেখবো প্রকৃত সাক্ষরতার ক্ষেত্রে কতটুকু উন্নতি হচ্ছে।
আপনারা কী উদ্যোগ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব বাচ্চারা পিছিয়ে আছে স্কুলগুলো তাদের জন্য আলাদা করে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করছে।
এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা বলেন, আমরা জুলাই মাসে একটা প্রি-অ্যাসেসমেন্টের ব্যবস্থা নিয়েছি। যাতে আমরা বুঝতে পারি, আমাদের শিক্ষার্থীরা কোন লেভেলে আছে সেটি বিচার পারি। শিক্ষকদের সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, আপনারা পরীক্ষাটা অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সঙ্গে নেবেন। কোন স্কুল কোন অবস্থানে আছে প্রকৃত তথ্যটা আমরা চাই। প্রকৃত তথ্য যদি না পাওয়া যায়, তাহলে তাদের উন্নয়নের জন্য আমরা কী ব্যবস্থা নেবো? তথ্যের যদি ঘাটতি থাকে তবে তারা পিছিয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, এটা বলার পর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য কেয়ার নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা অনেক স্কুলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পেয়েছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের আলাদা করে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই স্কুল টাইমের বাইরে গিয়েও কিন্তু ক্লাস নিচ্ছে। নভেম্বর মাসের শেষে বা ডিসেম্বরে আমরা কিন্তু আবারও তাদের জন্য আর একটা অ্যাসেসমেন্ট এর ব্যবস্থা নেবো। প্রাইমারি অ্যাসেসমেন্ট এবং পরবর্তী অ্যাসেসমেন্ট এই দুটির মধ্যে যে পার্থক্য আমরা পাবো, সেটা থেকে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের কতগুলো শিশু পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে সামনের দিকে এগিয়েছে, ভালো অবস্থানে এসেছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি চালুর বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, অভিভাবকদের দাবিতেই আমরা আবার বৃত্তি চালু করেছি। এটার ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আশা করি এটার ইতিবাচক ফল ফলবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা লেখাপড়া করে তারা তুলনামূলকভাবে অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। এর মূল কারণটা অর্থনৈতিক। আমরা যদি বৃত্তির মাধ্যমে তাদের কিছুটা আর্থিক প্রণোদনা দিতে পারি, তাহলে হয়তো তাদের হাইস্কুলে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়াটা সহজ হবে। এসব বিবেচনা থেকে আমরা বৃত্তিটা চালু করতে যাচ্ছি।
শিক্ষকদের দাবিগুলোর বিষয়ে এরইমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার মতো আর ভ্যালিড পয়েন্ট নেই। তারা তাদের দাবি প্রকাশ করতে পারে কিন্তু আমরা তাদের দাবি পূরণ করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হবে। এবার আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রোমোটিং লিটারেসি ইন দ্য ডিজিটাল ইরা’। এর বাংলা ভাবার্থ- প্রযুক্তির যুগে সাক্ষরতার প্রসার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের ৭ বছর ও এর বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার বর্তমানে ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর, যারা এখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি বা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সত্যিকার অর্থে সাক্ষরতার হার আরও কম হতে পারে। এটা হচ্ছে আমার পর্যবেক্ষণ। অনেক সময় সরকারের একটা প্রবণতা থাকে, যে বিষয়টি তার প্রচারিত বিষয়ের বিরুদ্ধে যায় সেটি চেপে রাখার। কিন্তু এ সরকারের একটা সুবিধা রয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব লিমিটেড ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করছি। সত্যটাকে ধামাচাপা দেওয়ার ইচ্ছা আমরা রাখি না। আমাদের উদ্দেশ্যটা ভালো।
শিশুকে সাক্ষর করে তোলা ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর কোনো কাজ নেই জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এই বেসিক বিষয়টিকে আমি গুরুত্ব দিতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের শিশুরা প্রকৃত সাক্ষর না হয়েই হাইস্কুলে যাচ্ছে। এই যে শিক্ষায় গ্যাপ থেকে যাচ্ছে, সারাজীবনে তা পূর্ণ হচ্ছে না। শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা এরইমধ্যে বার্তাটা পেয়ে গেছেন যে আমরা আসলে কী চাই।
প্রাথমিকের ছুটি কমিয়ে আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একজন শিক্ষককে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় শিক্ষা বহির্ভূত অনেক কাজে লাগাচ্ছে। যেন শিক্ষাটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না! আমরা চেষ্টা করছি এই বিষয়টি চিহ্নিত করে এটি কীভাবে রোধ করা যায়। আমাদের শিক্ষকের স্বল্পতা আছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের সাড়ে ৬৫ হাজার স্কুলের মধ্যে ৩২ হাজার স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। কারণ আমরা পদোন্নতি দিতে পারছি না, এজন্য শিক্ষক নেই। আর মামলার জন্য পদোন্নতির বিষয়টি আটকে আছে। মামলা যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় সেজন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। শহরে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি কিন্তু গ্রামে কম। এটা হচ্ছে তদবিরের কারণে। এটা প্রতিরোধ করা খুবই কষ্টকর একটা বিষয়। আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ অনলাইন বদলির মাধ্যমে এটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে। আমরা গত এক বছরে সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য যে বাধাগুলো রয়েছে সেগুলো অপসারণ করার চেষ্টা করছি।