Advertisement

ফোর্বসের তালিকায় যে কারণে স্থান পেল বাংলাদেশের স্টার্টআপ ‘পাঠাও’ ও ‘সম্ভব’

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্ভাবনাময় শীর্ষ ১০০টি স্টার্টআপ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের দুটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। কেন এই দুটি প্রতিষ্ঠান ফোর্বসের তালিকায় স্থান পেল। প্রথমত, গত ১০ বছরের মধ্যে এই দুটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ বেশি হয়েছে। বিনিয়োগও পেয়েছে। পাঠাওয়ের গ্রাহকসংখ্যা এখন এক কোটি। অন্যদিকে চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে সম্ভব। যা তরুণদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি চাকরি পেতে সহায়তা করছে।

প্রতিষ্ঠান দুটি হলো রাইড শেয়ার, খাদ্য সরবরাহ, ই-কমার্স, লজিস্টিকস ও ফিনটেক স্টার্টআপ ‘পাঠাও’ এবং জব-টেক ও এইচআর-টেক প্ল্যাটফর্ম ‘সম্ভব’। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের সংস্করণের ‘ফোর্বস এশিয়া ১০০ টু ওয়াচ’ নামের তালিকায় দেশীয় কোম্পানি দুটি স্থান পেয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের সম্ভাবনাময় ছোট প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ ও বিনিয়োগ পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে ১০০টি স্টার্টআপকে নির্বাচন করা হয়। প্রযুক্তি-ভিত্তিক সেবা যেমন দ্রুত প্রসার লাভ করতে পারে, তেমনি নতুন সমস্যার সৃজনশীল সমাধান দিতে পারে। পাঠাও ও সম্ভব সেই সমাধান দিচ্ছে।

স্টার্টআপ একধরনের ব্যবসায়িক ধারণা, যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কোনো সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। যেটা এর আগে কেউ এতটা সহজভাবে দেয়নি। বর্তমান পটভূমিতে স্টার্টআপ মূলত প্রযুক্তিনির্ভর। যেমন অ্যাপ, সফটওয়্যার বা ই-কমার্স, কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তি অথবা সামাজিক উদ্যোগ। স্টার্টআপ সাধারণত প্রচলিত ব্যবসা থেকে দ্রুত বড় হয়।

পাঠাওয়ের এখন গ্রাহক এক কোটি

ফোর্বস-এর তালিকায় কনজ্যুমার টেকনোলজি বা ভোক্তা প্রযুক্তি শ্রেণিতে তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের পাঠাও। ২০১৫ সালে ছোট একটি ডেলিভারি সেবা দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এখন রাইড শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ, ই-কমার্স, লজিস্টিকস ও ফিনটেকসহ বিভিন্ন সেবা দেয় কোম্পানি। কোম্পানিটি জানিয়েছে, পাঠাও অ্যাপ ৬০ লাখের বেশি বার ডাউনলোড হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটির বেশি মানুষ পাঠাও ব্যবহার করেছেন। প্রায় ৫ লাখ মানুষ পাঠাওয়ের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

পাঠাও গত বছর ভেঞ্চারসুকের নেতৃত্বে প্রি-সিরিজ বি রাউন্ডে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার তোলার মাধ্যমে মোট তহবিল ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ বিনিয়োগের মাধ্যমে পাঠাও তাদের ‘পাঠাও পে’ (একটি ডিজিটাল ওয়ালেট) ও ‘পে লেটার’ (এখন কিনুন, পরে প্রদান করুন) ফিনটেক সেবা সম্প্রসারণ করেছে।

পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘এই তালিকায় জায়গা পাওয়া প্রমাণ করে আমরা কত দূর এগিয়েছি। ফোর্বস-এর স্বীকৃতি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমাদের পথচলা এখনো অনেক বাকি। ফোর্বস-এর এই স্বীকৃতি শুধু পাঠাওয়ের জন্য নয়, বরং দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের অগ্রগতির প্রতীক। পাঠাও এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে নেপালের লাখের বেশি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। গত ১০ বছরে আমরা প্রমাণ করেছি যে একটি বাংলাদেশি কোম্পানি বিশ্বেও তার আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পারে।’

চাকরি পেতে সহায়তা করে ‘সম্ভব’

বাংলাদেশের ব্যবসায়ী পর্যায়ে (বিটুবি) জব-টেক ও এইচআর-টেক প্ল্যাটফর্ম ‘সম্ভব’ এবারই প্রথম ‘ফোর্বস এশিয়া ১০০ টু ওয়াচ’ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এরাও কনজ্যুমার টেকনোলজি বা ভোক্তা প্রযুক্তি শ্রেণিতে এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। ২০২২ সালে সম্ভব-এর যাত্রা শুরু হয় তিন তরুণ উদ্যোক্তা রিফাদ হোসেন, নাকিব মুহাম্মদ ফাইয়াজ ও হাসিবুর রহমানের হাত ধরে। সম্ভব বাংলাদেশের মানুষকে দক্ষতা ও লক্ষ্য অনুযায়ী উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীরা ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করে আবেদন এবং অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারেন। কোম্পানিগুলো ‘সম্ভব’ ব্যবহার করে প্রার্থীদের মূল্যায়ন, নিয়োগপ্রক্রিয়া আউটসোর্স করা ও বেতন-ভাতা পরিশোধ ব্যবস্থাপনা করতে পারে।

মূলত নিম্ন আয়ের নারীদের চাকরি খুঁজে দেওয়ার সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়। ২০২৩ সালে গেটস ফাউন্ডেশনের তিন লাখ ডলার অনুদান পেয়েছে তারা। চলতি বছরের মে মাসে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম কুকুন ক্যাপিটালের নেতৃত্বে প্রি-সিড ফান্ডিংয়ে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ ডলার তুলেছে তারা।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দেশে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লাখ প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত কর্মী খুঁজতে কাগজনির্ভর প্রক্রিয়ার সমস্যায় পড়ে। ফলে তাদের উৎপাদনশীলতা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। অন্যদিকে সাত কোটির বেশি চাকরিপ্রার্থী কাঙ্ক্ষিত সুযোগ না পেয়ে দালালচক্রের কাছে যেতে বাধ্য হন। এই বাস্তবতা বদলাতেই সম্ভব এক প্ল্যাটফর্মে এনেছে ডিজিটাল প্রফেশনাল প্রোফাইল। এতে যে কেউ চাইলে সরাসরি চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া চাকরির জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এ ছাড়া ‘সম্ভব’ এমপ্লয়ার সলিউশন বা নিয়োগকর্তাদের সমাধান চালু করে নিয়োগদাতাদের জন্য একটি ওয়ান-স্টপ সমাধান সেবা নিয়ে এসেছে। এই সুবিধার ফলে প্রার্থী মূল্যায়ন, রিক্রুটমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং, বেতন-ভাতা ব্যবস্থাপনা ও মানবসম্পদ (এইচ আর) সেবা প্রদান করে।

সম্ভবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফোর্বস-এর এই স্বীকৃতি আমাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত পরিশ্রম ও ব্যবহারকারীদের আস্থার ফল। আমরা আমাদের প্রত্যেক গ্রাহক ও চাকরিপ্রার্থীর কাছে কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে আমাদের লক্ষ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও জনশক্তি রপ্তানি করে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দেশের কর্মীদের সুযোগ বাড়ানো।’

আরও পড়ুন

Lading . . .