Advertisement

তিন ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠান পেল ডিএইচএল-ডেইলি স্টার বিজনেস অ্যাওয়ার্ড

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

ব্যবসা-বাণিজ্যে অসামান্য অবদানের জন্য দেশের তিন ব্যক্তি ও দুই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাদের এ পুরস্কার দিয়েছে বহুজাতিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ডিএইচএল ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। ২০২৪ সালে নিজ নিজ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অসামান্য প্রচেষ্টা ও অবদানের জন্য এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মানিত করা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার রেডিসন ব্লু হোটেলে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা পুরস্কার হিসেবে ট্রফি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এটি ছিল ডিএইচএল ও ডেইলি স্টার–এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডের ২৩তম আসর।

এবার বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা। আর ‘বছরের সেরা ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব’ বা ‘বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেয়েছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। সেরা নারী উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান শেয়ারট্রিপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাদিয়া হক। বছরের সেরা ব্যবসায় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বা এন্টারপ্রাইজ অব দ্য ইয়ার শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছে ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম মাহবুবুল আলম। আর সেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মাননা পেয়েছে সিটি ব্যাংক। সম্মাননা ট্রফি গ্রহণ করেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন।

অনুষ্ঠানে আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএইচএল ওয়ার্ল্ডওয়াইড এক্সপ্রেসের এদেশীয় ব্যবস্থাপক মো. মিয়ারুল হক ও দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম। ডিএইচএল ও ডেইলি স্টার ২০০০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে আসছে।

অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সব সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। আমরা অবশ্যই ব্যবসাবান্ধব হতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, বেসরকারি খাতের উন্নয়নেই ভবিষ্যৎ। অতীতের মতো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বড় বড় করপোরেশনের যুগ শেষ হয়েছে। এখন ব্যবসায়ীরাই উৎকৃষ্ট কাজ করছেন এবং ভবিষ্যতেও তাঁরা অবদান রাখবেন। আমরা একমত যে কর্মসংস্থান তৈরি করবে বেসরকারি খাত। সরকার কেবল সীমিত কিছু ক্ষেত্রে চাকরি দিতে পারে। গত ১১-১২ মাসে কর্মসংস্থানের তেমন উন্নতি হয়নি, ব্যবসাও দ্রুত বাড়েনি। ফলে কর্মসংস্থান কিছুটা স্থবির।’

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এখন এলডিসি উত্তরণ নিয়ে আলোচনা চলছে। আমি বিস্তারিত কিছু বলছি না, তবে ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা নিজেদের প্রস্তুত করুন। তারিখ নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত হবে না, কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং স্থানীয় বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। সরকার অবশ্যই নীতিগত সংস্কার, প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং প্রাথমিক সহায়তার মাধ্যমে ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা অনুষ্ঠান আয়োজকসহ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

আজীবন সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণকালে এসিআই চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘৯১ বছর বয়সে এবং ৬৫ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি যে, কেবল অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়— যতক্ষণ না কেউ ধারাবাহিক উন্নতি করতে চায়। অভিজ্ঞতা মানে যেন একই বছর বারবার পুনরাবৃত্তি না হয়। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেকে উন্নত করার দায় রয়েছে। উদ্ভাবন হতে হবে আমাদের স্থায়ী সঙ্গী। সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে, আপনারা সময়ানুবর্তী হন। সময় মূল্যবান— শুধু আপনার নয়, সবার জন্যই।’

অনুষ্ঠানে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে কিছু করপোরেট নেতা রাজনৈতিক সম্পর্ক ব্যবহার করে অতীতে ব্যাংক লুট করেছেন এবং দেশকে অপমানিত করেছেন। তাই আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে, সৎ ব্যবসায়ী ও অসৎ ব্যবসায়ীর মধ্যে পার্থক্য করা। এত দিন ধরে যাঁরা সততার সঙ্গে ব্যবসা করেছেন, তাঁরা শুধু সরকারি সহায়তার অভাবেই ভোগেননি, তাঁরা রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, পক্ষপাতিত্বের শিকার হয়েছেন। তবু তাঁরা সততা, মর্যাদা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে টিকে থেকেছেন। তাঁদেরই আমরা সম্মান জানাই। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে মাত্র ছয় মাস সময় আছে। আমি অনুরোধ করব, এই সময়টুকু ব্যবহার করে কিছু বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিন। ছোট ছোট উদ্যোগ হলেও তা বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

ডিএইচএলের এদেশীয় ব্যবস্থাপক মো. মিয়ারুল হক বলেন, প্রতিযোগিতামূলক হতে হলে বেসরকারি খাতকে পরিবর্তনের উপযোগী হতে হবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত, উদ্ভাবন ও সহযোগিতার মাধ্যমে এমন অংশীদারি গড়ে তুলতে হবে, যা স্থায়ী হয়।

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ব্যাংকারসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, ট্যুরিজম ও এভিয়েশন–বিষয়ক পাক্ষিক বাংলাদেশ মনিটর–এর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম। ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও এ কে আজাদ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তপন চৌধুরী, ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মুক্তাদির, ট্রান্সকম লিমিটেডের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

Lading . . .