প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

সিলেটে পাথর লুটের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিকে দেওয়া তিন কর্মদিবস রোববার শেষ হলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এজন্য আরও ৩ কর্মদিবস দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ। এদিকে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশ অথবা নীরবতা ছিল বলে জানান বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ভয়াবহ লুটপাটের শিকার হয়েছে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর, এর পাশের ১০ একরের রেলওয়ে বাঙ্কার ও জাফলং পর্যটনকেন্দ্র। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় শুরুতে রাতে লুট হলেও সম্প্রতি দিনে-রাতে সব সময়ই হয়েছে। ফলে একেবারে পাথর শূন্য হয়ে পড়েছে সাদাপাথর পর্যটন এলাকা। আর খানাখন্দে পরিণত হয় রেলওয়ে বাঙ্কার। বিপুল পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে জাফলং থেকেও। এ নিয়ে সারা দেশে সমালোচনা শুরু হলে তড়িঘড়ি করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। তিন সদস্যের এ কমিটিতে রাখা হয়, যার ব্যর্থতায় এই লুট সেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহারকে। এ নিয়েও নানা সমালোচনা হয়েছে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসেন সিংহ। অপর সদস্য পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক। রোববার কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এদিন বিকালে পদ্মাসেন সিংহকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, বিস্তারিত তদন্তের জন্য আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাই আরও তিন দিন সময় চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ যুগান্তরকে জানান, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কমিটিকে আরও তিন দিন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পাথর লুটকাণ্ডে স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট আমাদের করার কথা নয়। কিন্তু, আমরা পাথর লুটপাট যেন বন্ধ হয়, সেজন্যই তো সিলেটে গিয়েছিলাম। আমি যখন দেখলাম প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না বা নিচ্ছে না, তাদের সাহস দেওয়ার জন্য আমি এবং ফাওজুল ভাই (উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান) ফিল্ডে গেলাম। রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি জনগণকে ধন্যবাদ জানাই তারা যে লুটেরা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছে। যার ফলে আজ যে অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছে, এতে ভবিষ্যতে পাথর লুটবার আগে দুইবার চিন্তা করবে।’ এ বিষয়ে ধরিত্রি রক্ষায় আন্দোলন (ধরা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম যুগান্তরকে বলেন, বিগত রাজনৈতিক সরকারের সময় লুটপাট করতে দেখা গেছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। বর্তমান সরকারের তো কোনো দল নেই, প্রচুর ক্ষমতা রয়েছে তবে কেন রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলে ব্যাকফুটে যাচ্ছে। মাঠে সেনাবাহিনী রয়েছে, তারাও কেন এই লুট ঠেকাতে পারেনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কাশমীর রেজা যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে এটা যদি উপদেষ্টা মনে করেন, তবে কেন এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাদের স্বপদে রেখে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সম্ভব নয়।’
পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্যের পর সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান ও জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদের বক্তব্য জানতে চাইলে দুজনই এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বিভাগীয় প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, ভয়াবহ এই লুটের ঘটনায় আজ মন্ত্রণালয় থেকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি হতে পারে।