প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান বলেছেন, আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা মনে করি ওই জুলাই ঘোষণা আগামী দিনের নির্বাচন, আগামী দিনের সংসদ, আগামী দিনের রাজনীতি, আগামী দিনের গণতন্ত্রের পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি একটি রাজনৈতিক দল যারা আজও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি, তারা জুলাই ঘোষণায় একাত্তর আছে বলে হতাশা প্রকাশ করেছে। আমাদের হাজার বছরের অর্জন আমাদের এই রক্তে কেনা স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান, যারা একাত্তরকে মেনে নিতে পারে না তারা জুলাই ঘোষণাপত্রকে মেনে নিতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। তারা বলে, আমরা পিআর চাই। পিআর কাকে বলে তারা নিজেরাই জানে না। পিআর কী, পিআর কবে এলো, কীসের পিআর- আমাদের সাড়ে বারো কোটি ভোটার কি চেনে? চেনে না। পিআর মানে আপনি ভোট দেবেন বকুলকে, ভোট দেবেন হেলালকে আর এখানে এমপি হবে ওই কক্সবাজারের কেউ অথবা চুয়াডাঙ্গার অথবা টাঙ্গাইলের কেউ। আপনি আপনার এমপিকে চেনেন না। ওই পিআর আমরা মানি না।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেলে খুলনা নগরের শিববাড়ি মোড়ে বিজয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ বিজয় সমাবেশের আয়োজন করে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি।
এ সময় আযম খান বলেন, কেউ কেউ বলে পিআর না হলে নাকি নির্বাচন হতে দেবেন না। যারা বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন। আমরা কি দেশ স্বাধীন করিনি। অতএব আপনাদের বলব- দেশবিরোধী বহু কর্মকাণ্ড করেছেন, আর নয়। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে আসুন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আসুন- আপনাদের স্বাগত জানাই। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় যাবেন, ভোট না দিলে বিরোধী দলে বসবেন, অযথা দেশে আবার একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবেন না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় এই ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, কেউ বলে আগে সংস্কার পরে নাকি নির্বাচন। আরে সংস্কার শব্দটি কোথায় পেলেন। সংস্কার তো আমরা বিএনপি শিখিয়েছি। ২০১৭ সালে বিএনপির নেত্রী দেশের তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংস্কারের ১৭ দফা ঘোষণা করেছিলেন। ২০২২ সালে তারেক রহমান সংস্কারের ২২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন, সর্বশেষ রাজপথে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমান সংস্কারের ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। একদিনে সংস্কার হয় না। যে বন্ধুরা বলে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন তারা সংস্কার বোঝে না। তারা মনে করে নির্বাচন না হলেই ভালো। কারণ ভোট তো তাদের নেই।
তিনি বলেন, যারা মনে করে বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হলে নির্বাচন নয়। বিচার প্রক্রিয়া তিন মাস, ছয় মাস, এক বছরের বিষয় নয়। ওই সংস্কারের মতো এটাও চলমান প্রক্রিয়ায় পাঁচ বছর, দশ বছর, বিশ বছর লাগতে পারে। তাহলে কি এত দিন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করবেন। নির্বাচন না হলে দেশটা অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। নির্বাচন না হলে বিনিয়োগ বন্ধ আছে। নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হচ্ছে না, নির্বাচন ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশই আমাদের একটি অগ্রসরমাণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে না। সব সমস্যার সমাধান নির্বাচন। সে নির্বাচন হতে দেবেন না।
তিনি বলেন, আপনারা চান বিচার, তারপরে পিআর তারপরে সংস্কার- এর একটাও যেহেতু দুই, চার, দশ বছরে সম্পন্ন হবে না আপনাদের কাছে নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হবে না- কারণ আপনারা তো এমনিতেই ক্ষমতার সর খাচ্ছেন। নির্বাচন এলেই তো ওই সর খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই নির্বাচন মানেন না, জনগণের ক্ষমতায়ন চান না।
তিনি আরও বলেন, পরিষ্কার বলি ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসুন। জনগণের আদালতে আসুন। জনগণ ভোট দেবে। আগের দিন নির্বাচনের মতো সিল হবে না। দিনের ভোট রাতে হবে না। আমি-ডামি নির্বাচন হবে না। জনগণের ভোটে নির্বাচন হবে। আসুন জনগণের রায় নিয়ে টালবাহানা করবেন? দেশটা আবার অস্থিতিশীল করবার চেষ্টা করবেন? অনুরোধ করি ওপথে যাবেন না- একাত্তরের মতোই কিন্তু জবাব পেয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাদের সতর্ক করে বলব, এই যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান, ছাত্র অভ্যুত্থান, শ্রমিক অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক অভ্যুত্থান হলো- সেখানে সাড়ে আটশর মতো বিএনপির নেতাকর্মী শাহাদাত বরণ করেছে। তালিকায় কয়টা নাম আছে আপনাদের বলতে পারবেন? আপনারা তো আন্দোলনের ভয়ে কেউ আওয়ামী লীগে ঢুকে গিয়েছিলেন, কেউ নানা দলে ঢুকে গিয়েছিলেন, বিএনপি রক্ত দিয়েছে রাজপথে, বিএনপি জেলে গেছে, বিএনপি গুম হয়েছে, খুন হয়েছে- জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে রাজপথ থেকে উঠে যায়নি। কোনো লুকোচুরি করে আওয়ামী লীগ বা অন্য দলে গিয়ে ছদ্মবেশ ধরেনি।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিজয় মিছিল কেডিএ মোড়-যশোর রোড-ফেরিঘাট হয়ে খানজাহান আলী রোড দিয়ে রয়েল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
আরও পড়ুন