Advertisement

এবার কাপাসিয়ায় চা চাষ

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান। কাপাসিয়ায় পৈত্রিক সমতল ভূমির প্রায় ৮ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন ৪টি চা বাগান। উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের চিনাডুলি গ্রামের এ চা বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন। প্রায় সাত বছর ধরে নিরলস পরিশ্রমের পর গত তিন বছর ধরে বাগান থেকে একটি কুড়ি দুটি পাতা সংগ্রহ করে সবুজ চা তৈরি করছেন। তার বাগানের অতি উন্নত মানের চা এখন বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার বেশকিছু ক্রেতা নিয়মিত কিনে নিচ্ছেন। অচিরেই তিনি চা বাগান কর্মচারীদের মাসিক খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখার আশা করছেন।

রাজধানীর উত্তরার ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি’র ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৩৫ বছর ১৪টি চা বাগানে ব্যবস্থাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সেসব চা বাগানের মাটির সঙ্গে কাপাসিয়ার মাটির গুণগত মানে অনেক মিল পেয়েছেন। তাই অনেক দিন থেকেই কাপাসিয়ার পৈত্রিক ভূমিতে চা চাষের পরিকল্পনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও জামালপুর জেলায় চা চাষের ব্যাপক সফলতা দেখে তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। তাই ২০১৯ সালে সিলেট থেকে কিছু চা চারা এনে প্রাথমিকভাবে সমতল এঁটেল মাটিতে সেগুলো রোপণ করেন এবং আশানুরূপ ফল পেয়ে তিনি পর্যায়ক্রমে আরও চারা রোপণ করেন। একপর্যায়ে তিনি বানার নদীর তীরবর্তী প্রায় দুই বিঘা বেলে দোআঁশ মাটির দুটি খেতে চা চারা রোপণ করেন, যা চমৎকারভাবে বেড়ে উঠেছে। তিনি আরও জানান, চা বাগানের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো-চা গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকতে পারবে না। কিন্তু মাটিতে পানি ধরে রাখার সক্ষমতা থাকতে হবে। তাই তিনি তার বাগানে পানি সেচের এবং ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা রেখেছেন। আর চা বাগানে সিমজাতীয় কাঠ গাছ রোপণের নিয়ম থাকায় সিলেট থেকে তিনি সেগুলো এনে লাগিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সাধারণ কাঠ গাছের নিচেও চা চারা রোপণ করে আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছেন এবং বড় আকারের বাগান গড়ে তুলেছেন।

তিনি আরও জানান, চা চারা কলম এবং বিচি থেকে উৎপাদন করা গেলেও তিনি সিলেট অঞ্চল থেকে কলমের চারা কিনে এনেছেন। প্রতিটি চারা ২ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে এবং প্রায় ৮ বিঘা জমিতে তিনি ২০ হাজার চারা রোপণ করেছেন। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উৎপাদনে যাওয়ার আগপর্যন্ত একরপ্রতি সর্বসাকুল্যে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে ৩৫-৪০ বছর পর্যন্ত এখান থেকে চা পাতা সংগ্রহ করা যাবে। যদি শুধু কাঁচা পাতা বিক্রি করা হয় তবুও বছরে এক একর জমি থেকে প্রায় ১ লাখ টাকার চা বিক্রি করা যায়। আর চা উৎপাদন করে বিক্রি করলে প্রায় আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করা যায়। অথচ অন্য কোনো ফসল কিংবা ফল উৎপাদন করে দীর্ঘদিন এত বিশাল লাভ আশা করা যায় না। তাছাড়া বাড়ির আঙিনাসহ যে কোনো অনাবাদি এমনকি পতিত জমিতেও চা চাষ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

অধ্যাপক লুৎফর জানান, আপাতত বাগানের কুঁড়িগুলো দিয়ে সবুজ চা তৈরি করছেন। পাতাগুলো সংগ্রহের পর কয়েক ঘণ্টা ঠান্ডা করে আর্দ্রতা কমে এলে ৫ মিনিট গরম পানিতে সিদ্ধ করে হাতে পিসে গোলাকার গুটি বানানোর পর রোদে শুকানো হয়। এরপরই এগুলো সবুজ চা হয়ে যায়। এভাবে উৎপাদিত চায়ের গুণগত মান অত্যন্ত উন্নত বলে পাইকাররা তার কাছ থেকে প্রতি কেজি চা এক হাজার টাকায় কিনে নিচ্ছেন। বর্তমানে প্রতি মাসে ১২-১৫ কেজি চা উৎপাদন হলেও অচিরেই তা ৩০-৩৫ কেজিতে উন্নীত হবে বলে তিনি আশা করছেন। এক সময় তিনি অর্থডক্স বা সিটিসি পদ্ধতিতে ব্যাপক হারে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন। তখন লাভজনক অবস্থানে গিয়ে তিনি স্থানীয় বেকারদের কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আউলিয়া খাতুন যুগান্তরকে জানান, তিনি সম্প্রতি কাপাসিয়ায় যোগদান করেই চা বাগানগুলো পরিদর্শন করেছেন। কাপাসিয়ায় চা চাষে সাফল্যের বিষয়টি স্থানীয় কৃষকদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। এ ব্যাপারে অন্যরাও আগ্রহী হলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

Lading . . .