Advertisement

যেখানে প্রতিদিনই বেঁচে থাকার সংগ্রাম

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ছবি: যুগান্তর
ছবি: যুগান্তর

পটুয়াখালীর দশমিনা-বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা। নদী আর জোয়ার-ভাটার মাঝে আটকে আছে এখানকার মানুষের জীবন। নেই পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা-কাঁচা সড়ক, বাঁশ-কাঠের সাঁকো, অপ্রতুল শিক্ষা ও চিকিৎসা। তার ওপর আছে বাল্যবিয়ের অভিশাপ, নদীভাঙন ও প্রভাবশালীদের দমনপীড়ন। বিশেষ করে চরবোরহান, চরশাহজালাল ও চরহাদির বাসিন্দাদের প্রতিটি দিন কাটে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে।

জানা যায়, উপজেলার মোট জনগোষ্ঠীর ৫২ দশমিক ৮ শতাংশই দরিদ্র। আর ওই তিন চরে বসবাস করেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। এসব চরের চারপাশে নদী হওয়ায় যাতায়াতের বিকল্প কোনো পথ নেই। চরের সিংহভাগ সড়কই মাটির। বাসিন্দাদের যাতায়াতে হাতেগোনা কয়েকটি ছোট বাহন থাকলেও সেতুর অভাবে তা চলে নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতর। ভাড়াও তুলনামূলক বেশি। চরগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছলেও বাড়েনি চরবাসীর জীবনমান। বিদ্যুৎ সুবিধা পেতেও দালালচক্রকে দিতে হয় ঘুস।

চরবাসী তাদের সন্তানদের শিক্ষায় তেমন গুরুত্ব দেন না। পড়াশোনার চেয়ে আয়-রোজগারেই তারা বেশি আগ্রহী। জেলে পরিবারগুলো ছেলে একটু বড় হলেই মাছ ধরার কাজে লাগিয়ে দেয়। হাতেগোনা কয়েকটি বিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান করান না। তাছাড়া প্রায় বারো মাসই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকে চর। আছে নদীভাঙন। পানি ডিঙিয়ে স্কুলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। চরবোরহান, চরশাহজালাল ও চরহাদিতে বাল্যবিয়ের প্রবণতাও বেশি। নিরক্ষর মানুষের বাল্যবিয়ের কুফলও অজানা। তারা মনে করেন, যত দ্রুত মেয়ে বিয়ে দিয়ে সাংসারিক করা যায় ততই মঙ্গল। অনেক পরিবার ছেলে সন্তানকেও অল্প বয়সে বিয়ে দেন। তাদের ধারণা, ছেলেরা দ্রুত বিয়ে করলে রোজগার করে সংসারের হাল ধরবে।

দরিদ্রতার কারণে অধিকাংশ পরিবার তাদের সন্তানদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। তাছাড়া এখানকার বাবা-মায়েরা জানেন না, কোন বয়সের শিশুদের কীভাবে পরিচর্যা করতে হয়। শিশুদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে তাদের কী ধরনের খাবার খাওয়াতে হয়। মায়েরা শিশুদের ভাতের ওপর নির্ভরশীল করেই বড় করেন।

চরের মানুষের চিকিৎসাসেবা বলতে কেবল স্থানীয় ছোট ফার্মেসি ও হাতুড়ে ডাক্তারই ভরসা। অনেকে নির্ভর করেন কবিরাজি চিকিৎসার ওপর। চরবোরহানে সরকারি প্রাথমিক চিকিৎসাব্যবস্থা থাকলেও তা নিয়ে আছে স্থানীয়দের অভিযোগের পাহাড়। উপজেলা সদর থেকে তিনটি চরেরই যাতায়াতের মাধ্যম দীর্ঘ নদীপথ। ফলে জরুরি চিকিৎসা নিতে বাসিন্দাদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।

এদিকে সীমানা বিরোধ নিয়ে ভোলা জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে এসব চরবাসীর প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে জিম্মি থাকেন চরের বাসিন্দারা। চরগুলোতে ন্যায়বিচারের কোনো উদাহরণই নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিরীহ মানুষের সঙ্গে সবকিছু করেন গায়ের জোরে। নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হন চরের দরিদ্র মানুষ।

এনজিও কোস্টের প্রোগ্রাম অফিসার মো. আতিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, চরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসেবার সমস্যা খুব বেশি। এখানে চিকিৎসাসেবার ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা দরকার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান যুগান্তরকে বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে প্রশাসন কাজ করছে। তাদের যখন যা প্রয়োজন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন

Lading . . .