Advertisement

কুষ্টিয়ার চর সাদিপুরকে পাবনায় যুক্ত করার উদ্যোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন, দুর্বৃত্তদের হামলা

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

কুষ্টিয়ায় সীমানা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার দুপুরে কুমারখালী উপজেলার চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠেছবি: প্রথম আলো
কুষ্টিয়ায় সীমানা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার দুপুরে কুমারখালী উপজেলার চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠেছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চর সাদিপুর ইউনিয়নকে পাবনা সদরের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এ ঘটনার পর কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

দুর্বৃত্তদের হামলায় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজম আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সমাবেশস্থলের বেশকিছু চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।

মানববন্ধনের আয়োজকেরা বলছেন, পদ্মা নদীর কারণে কুষ্টিয়া জেলা ও কুমারখালী উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন চর সাদিপুর ইউনিয়ন। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় এখানকার মানুষের জীবনমান অনুন্নত হলেও শান্তিতে বসবাস করছেন। একটি চক্র ব্যক্তিগত স্বার্থে ষড়যন্ত্র করে চর সাদিপুরকে পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করে চায়। এ জন্য আজ বেলা ১১টায় চর সাদিপুর পরিদর্শনে আসার কথা ছিল পাবনা প্রশাসনের একটি দল। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধনের আয়োজন করে। সেখানে সকাল ১০টার দিকে পাবনার দুর্বৃত্তরা দেশি অস্ত্রসস্ত্রসহ হামলা করে চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করে। পরে দুপুর ১২টার দিকে ‘মা, মাটি, মোহনা, আমরা পাবনা যাব না’ স্লোগানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

আহত বিএনপির নেতা গোলাম আজম বলেন, ‘পাবনার প্রশাসন স্থানান্তরের বিষয়ে পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। এর প্রতিবাদে হাজারো এলাকাবাসী মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু হঠাৎ পাবনার একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল বহর নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এখনই যদি এই অবস্থা হয়, তবে পাবনার সঙ্গে যুক্ত হলে আমাদের ওপর নানাভাবে প্রভাব খাটাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে (উত্তর) প্রায় ২৫ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় চর সাদিপুর ইউনিয়ন। সেখানে ৯টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এটি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমটার এবং জেলা শহর থেকে প্রায় ২৯ কিলোমটার দূরে। যার উত্তর ও পশ্চিমে রয়েছে পাবনার হেমায়েতপুর ও দৌগাছি ইউনিয়ন। ১৯৬২ সালের আগপর্যন্ত এটি পাবনা সদরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পাবনা শহরে যেতে মাত্র ১০ মিনিট সময় লাগে।

জানা গেছে, প্রায় ছয় কিলোমিটার পদ্মা নদীর বুকের ওপর দিয়ে জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চর সাদিপুরের বাসিন্দারা। ভরা বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর অধিকাংশ জুড়ে চর জাগে। তখন পানিতে নৌকা ও চরে ইজিবাইক, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল এবং পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন তাঁরা। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও সময় অপচয়ের সঙ্গে পাল্লা দেয় চরম ভোগান্তি। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চরাঞ্চলটিকে পাবনার সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

স্থানীয় কৃষক হামিদ সরদার (৭৫) বলেন, ‘পদ্মা নদীর কারণে আমাদের কপাল পুড়েছে। তবুও আমার বাপ–দাদারা বাস করেছে কুমারখালীতে। আমরাও বাস করতে চাই। আমাদের চলাচলের ভোগান্তি হলেও শান্তিতে আছি।’

চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেছের আলী খাঁ বলেন, ‘হট্টগোল হয়েছে পরিষদ চত্বরে। পাবনার প্রশাসন আজ আর আসেনি। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক হুমাউন কবির বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, চর সাদিপুরকে পাবনার সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় কি না, এই মর্মে পাবনা জেলা প্রশাসনের লোকজন পরিদর্শনে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের হট্টগোলের কারণে তাঁরা আসেননি। পরবর্তী বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চর সাদিপুর ইউনিয়নটি পাবনার সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে সরকারের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করার দিন ছিল আজ। কিন্তু সেখানে তার আগেই ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এ জন্য যাওয়া হয়নি। পরবর্তী সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Lading . . .