খাল ভরাট হয়ে বিলের পানিনিষ্কাশন বন্ধ, এক হাজার বিঘায় আমন চাষ হচ্ছে না
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

বিস্তীর্ণ বিলের বুক চিরে চলে গেছে ইটের সড়ক। বিল ভাগ হয়ে গেছে দুই ভাগে। একটির নাম খয়রা-নাওঘাটা বিল, অন্যটি দক্ষিণের বিল। জলাবদ্ধতার কারণে বিলের বেশির ভাগ জমিতে এবারও আমন ধানের চাষ হচ্ছে না।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া, রায়পুর এবং বন্দবিলা ইউনিয়নে বিল দুটির অবস্থান। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, মাত্র দেড় কিলোমিটার খাল ভরাট হয়ে পানিনিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে বিল দুটির প্রায় এক হাজার বিঘা জমি অনাবাদী হয়ে আছে। জুলাইয়ের শুরু থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত আমন মৌসুম। ধানের চারা রোপণের সময় মধ্য জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ক্ষেত্রপালা গ্রাম থেকে বিলের মাঝখান দিয়ে একটি ইটের সড়ক পূর্ব থেকে সোজা পশ্চিম দিকে সাদীপুর গ্রাম পর্যন্ত চলে গেছে। সড়কের দক্ষিণ পাশে দক্ষিণের বিল, উত্তর পাশে খয়রা-নাওঘাটা বিল। বিলের পূর্ব পাশের উপরের অংশে অল্প কিছু জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে বিলের বেশির ভাগ অংশে পানি থই থই করছে।
বিল দুটির পূর্ব পাশে নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ক্ষেত্রপালা গ্রাম, দক্ষিণে রায়পুর ইউনিয়নের সিলুমপুর, লক্ষ্মীপুর, আজমপুর, পাকুড়িয়া ও দৌলতপুর গ্রাম, পশ্চিমে বন্দবিলা ইউনিয়নের সাদীপুর গ্রাম, উত্তরে নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের খানপুর এবং বন্দবিলা ইউনিয়নের পাঠান পাইকপাড়া, গাইদঘাট ও রাঘবপুর গ্রাম। বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা, বন্দবিলা, পুলের হাট, সাদীপুর, রাঘবপুর, পাঠান পাইকপাড়া, খানপুর ও নারিকেলবাড়িয়ার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চিত্রা নদী।
কৃষকেরা জানান, খয়রা-নাওঘাটা বিলে প্রায় ৪০০ বিঘা এবং দক্ষিণের বিল প্রায় ৬০০ বিঘা জমি রয়েছে। খয়রা-নাওঘাটা বিলের পশ্চিম-উত্তর পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার রাঘবপুর খাল এবং উত্তর পাশে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ খানপুর খাল। খাল দুটির মাধ্যমে চিত্রা নদীর সঙ্গে খয়রা-নাওঘাটা বিলের সংযোগ রয়েছে। খয়রা-নাওঘাটা এবং দক্ষিণের বিলের পানি দুই খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। বেশি পানিনিষ্কাশিত হয় খানপুর খাল দিয়ে। কয়েকবছর আগে রাঘবপুর খালের এক অংশ খনন করা হয়েছে। কিন্তু খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি বের হয় না। বরং নদীর পানি এ খাল দিয়ে বিলে ঢোকে। খানপুর খাল সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। খাল দিয়ে বিলের পানি বের হয় না। এ কারণে বৃষ্টি বেশি হলে বিল দুটির বেশিরভাগ জমিতে আমন ধান চাষ করা যায় না।
তাঁরা জানান, এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় রাঘবপুর খাল দিয়ে নদীর পানি বিলে ঢুকেছে। খানপুর খাল দিয়ে পানি বের হতে না পারায় বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিলে এখন স্থানভেদে তিন থেকে চার ফুট পানি রয়েছে। আমন ধানের চারা রোপণের এখনই সময়। কিন্তু পানি থাকায় বিলে ধানের চারা রোপণের মতো কোনো অবস্থা নেই। বিলে এবার ধান হবে না।
জমিতে চার ফুট জল। আমন ধানের চারা রোপণের সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু জমিতে এখনো আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারিনি। এবার যে কী খাব?জীবন মণ্ডল, সাদীপুর গ্রামের কৃষক
দক্ষিণের বিলে পাঁচ বিঘা (৪৬ শতকে বিঘা) জমি আছে খানপুর গ্রামের কৃষক অচিন্ত্য মণ্ডলের (৫৮)। তিনি বলেন, ‘জলের কারণে গত দুই বছর বিলে আমন ধান চাষ করতে পারিনি। এখন বিলে চার ফুট জল। এবারও আমন ধান হবে না। জল নেমে গেলে হয়তো বোরো ধান করা যাবে। খানপুর খাল খনন করা না হলে বিলে আর আমন ধান চাষ করা যাবে না।’
সাদীপুর গ্রামের কৃষক জীবন মণ্ডল (৫০) বলেন, ‘দক্ষিণের বিলে আমার ২৭ শতক জমি আছে। রাঘবপুর খাল দিয়ে নদীর জল বিলে ঢুকেছে। জমিতে চার ফুট জল। আমন ধানের চারা রোপণের সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু জমিতে এখনো আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারিনি। এবার যে কী খাব?’
খয়রা-নাওঘাটা বিলে এক বিঘা জমি আছে পাঠান পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম খানের (৫২)। জমিতে চার ফুটের ওপর পানি। তিনি বলেন, ‘বোরো মৌসুমে বিল শুকিয়ে গিয়েছিল। বিলে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির পানি এবং খাল দিয়ে ঢোকা নদীর পানি বিল থেকে বের হচ্ছে না। এ কারণে এবার বিলে আমন ধান হবে না। ভরাট হয়ে যাওয়া দেড় কিলোমিটার খানপুর খাল খনন করলে বিলের পানি নেমে যেত। বিলে আমন ধান হতো। কিন্তু খালটি খনন করা হচ্ছে না।’
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহান বলেন, ‘এবার বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি এবং খাল দিয়ে প্রবেশ করা নদীর পানিতে খয়রা-নাওঘাটা এবং দক্ষিণের বিল প্লাবিত হয়েছে। খানপুর খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিল থেকে পানিনিষ্কাশিত হতে পারছে না। এ কারণে বিল দুটির বেশির ভাগ জমিতে এবার আমন ধান চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আমন ধানের চারা লাগানোর সময় এখনো আছে। এই সময়ের মধ্যে বিলের আরও বেশি অংশে আমন ধান লাগানোর জন্য আমরা কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছি। খালটি খননের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন