Advertisement

১১০ কোটি টাকার বালি পাথর সরানোর পাঁয়তারা

যুগান্তর

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

ছবি: যুগান্তর
ছবি: যুগান্তর

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এবার নিলামের আড়ালে সরকারি মূল্য ও আয়কর পরিশোধ ছাড়াই প্রায় ১১০ কোটি টাকার খনিজ বালি-পাথর সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা যুক্তরাজ্যে পলাতক সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য রণজিত চন্দ্র সরকারের ঘনিষ্ঠ সহচর আ.লীগ নেতা মোতালেব ওরফে ‘পাথ্থর মোতালেব’। তাহিরপুরের জাদুকাটা নদী তীরবর্তী ছড়ার পাড় গ্রামের মৃত মহর আলীর ছেলে তিনি।

উচ্চ আদালত ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) কিছু কর্মকর্তা এ দুর্নীতির মহোৎসবে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সরেজমিন তাহিরপুরের জাদুকাটা নদী তীরবর্তী এলাকা, লাউরগড় বাজারের উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পূর্বপাড়া, পার্শ্ববর্তী ঢালার পাড়, ছড়ার পাড়, একাধিক গ্রামের বাড়িতে, সড়কের পাশে, ঝোপঝাড় ও জঙ্গলের ভেতর খনিজ বালি ও নুরি পাথর স্তূপ (ডাম্পিং) করে রাখতে দেখা গেছে। ডাম্পিং করে রাখা এসব খনিজ বালি, পাথরের একাধিক ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যুগান্তরের কাছে রয়েছে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাদুকাটা নদীর বালিমহাল-১, ২ ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর ওই বালিমহাল দুটির ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। গেল কয়েক বছর জাদুকাটা নদীতে পৃথকভাবে খনিজ পাথরমহাল ইজারা দেওয়া হয়নি। আর এ সুযোগ কাজে লাগান আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, একসময় টং-দোকানে পান বিক্রি করে সংসার চালাতেন মোতালেব। পরে বালি-পাথরের অবৈধ বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে এখন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। কথিত পাথর সমিতির সভাপতি রণজিত চন্দ্র সরকারের ছায়াতলে মোতালেব স্থানীয় বালি-পাথর কারবারিদের ব্যবহার করে জাদুকাটা নদীর উৎসমুখ ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে পাথর (বোল্ডার) আনতে থাকেন। একই সঙ্গে জাদুকাটা নদীর চর, তীর, আশপাশের এলাকা, সরকারি খাস বালি ভূমি থেকে শতাধিক ড্রেজার ও সেভ মেশিনে কোয়ারি করে উত্তোলন করতে থাকেন খনিজ সিঙ্গেল (নুরি পাথর), (বোল্ডার) পাথর ও বালি। বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখা অবৈধভাবে সংগৃহীত এসব খনিজবালির বাজারমূল্য সরকারি ভ্যাট-আয়কর ছাড়াই ১০০ থেকে ১১০ কোটি টাকা।

স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়ে মোতালেবচক্র ৩ আগস্ট ১০ হাজার ৭৪৩ ঘনফুট পাথর জব্দ দেখিয়ে বিএমডির উপপরিচালক মো. মামুনুর রশীদকে দিয়ে নিলামের আয়োজন করান। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের হলরুমে এ নিলামের আয়োজন হয়। ওইদিনের নিলামও স্থগিত হয়। পরে বিএমডির মামুনুর রশীদ কয়েক লাখ টাকার পাথর জব্দ দেখিয়ে ফের নিলামের ঘোষণা দেন। আজ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের হলরুমে হবে সেই নিলাম।

স্থানীয় কারবারিদের অভিযোগ, মোতালেবচক্র নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অতীতের মতো প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারি মূল্য, ভ্যাট-আয়কর ছাড়াই ১১০ কোটি টাকার খনিজ বালি-পাথর সরিয়ে নেবে।

বুধবার তাহিরপুরের ছড়ার পাড় গ্রামের মোতালেবের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে তিনি জাদুকাটা বোল্ডার পাথর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করে বলেন, আমি পান দোকানদারি করিনি বরং লাউরগড় বাজারে মুদি দোকানদারি, পল্লিচিকিৎসক হিসাবে ডাক্তারি করতাম। চাঁদা তোলা, বালি-পাথর সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি। একপর্যায়ে বলেন, ডিসি অফিসে ৭ আগস্ট (আজ) জব্দকৃত পাথর বিএমডি থেকে উন্মুক্ত নিলাম হবে। নিজ বাড়িতে পাথর বোল্ডার ও পাথর ভাঙার মেশিন নেই বলেও দাবি করেন তিনি। চার চাকার গাড়িটি ছেলের শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার পেয়েছেন বলেও জানান মোতালেব।

অভিযোগ উঠেছে, এই নিলামের আড়ালে মোতালেবচক্রের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা ঘুস জায়েজ করতে ফের ১১০ কোটি টাকার খনিজ বালি পাথর সরিয়ে নেওয়ার ফাঁদ তৈরি করেছেন মামুনুর রশীদসহ বিএমডির কয়েকজন কর্মকর্তা।

বুধবার খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) উপপরিচালক মো. মামুনুর রশীদের কাছে জব্দকৃত খনিজপাথরের পরিমাণ ও নিলামকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ডিজি স্যার, পরিচালক ছারোয়ার হোসেন স্যার এসব জানেন। বিএমডির ম্যাজিস্ট্রেট দুইবারে ১০ হাজার ৭৪৩ ঘনফুট পাথর জব্দ করেছেন।

আরও অধিক পরিমাণ পাথর সিঙ্গেল বোল্ডার থাকার পরও কেন জব্দ করা হয়নি-জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

বুধবার খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আনোয়ারুল কবীরের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

Lading . . .