Advertisement

ওসির ঘুস-বাণিজ্য, হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভারতগামী যাত্রীরা

যুগান্তর

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া চেকপোস্টে ওসির নেতৃত্বে ঘুস-বাণিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোটা অঙ্কের টাকা দিলেই অনায়াসে মামলার আসামিও দেশ ত্যাগ করে যেতে পারছেন ভারতে। বিশেষ করে ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মেডিকেল ভিসায় ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীর কাছ থেকে নানা অজুহাতে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার ঘুস। যাত্রীদের অভিযোগ, ওসিসহ ইমিগ্রেশন পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দালালদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। যাত্রী হয়রানি ও ঘুস লেনদেনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও বর্তমানে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

যুগান্তরের এই প্রতিবেদক গত ১ মাস আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনে অনুসন্ধান করে ঘুস লেনদেনসহ ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন, যা এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষণ আছে।

ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ইমিগ্রেশন ওসি ও সংশ্লিষ্ট কিছু পুলিশ সদস্য মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুস আদায় করছেন। টাকা না দিলে তাদের ‘ডকুমেন্টস ঠিক নেই’ কিংবা ‘মেডিকেল কনফার্মেশন ঝুঁকিপূর্ণ’ ইত্যাদি অজুহাতে সীমান্ত পারাপার আটকে দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুস আদায় করে থাকে এই চক্রটি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পাসপোর্টে সিল, ভিসা যাচাই ও ছবি তোলার মতো প্রক্রিয়াগুলোরও ব্যাপক অনিয়ম চলছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

২১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুরের আব্দুল আউয়ালের ছেলে হাসান মিন্টু ভারতে যান। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। মিন্টুর মামলা থাকায় বন্দরের লাগেজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় এক টিভি সাংবাদিক ওসির সঙ্গে এ রফাদফা করেন। মামলার কথা জেনেও এই পুরো অবৈধ কাজটি গোপনে ওসি একাই করেছেন এবং ওসির আইডি থেকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। আর এ জন্য ওসি আব্দুস সাত্তার ওই সাংবাদিকের মাধ্যমে মিন্টুর কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা ঘুস নেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ভারতের আগরতলার নমিতা বণিক নামে এক যাত্রী ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন। তার ভিসায় একসঙ্গে ৬০ দিনের বেশি বাংলাদেশে অবস্থান করতে পারবে না উল্লেখ থাকলেও তিনি অতিরিক্ত আরও ১ মাস ২০ দিন অবৈধভাবে বেশি ছিলেন। ইমিগ্রেশনের কম্পিউটার ডাটা এন্টিতে দেখা যায় ২ আগস্ট তিনি আবার আগরতলা ফিরে যান। আর এই পুরো অবৈধ কাজটি করেছেন এসআই আব্দুর রহিমের আইডি থেকে। আর এ জন্য ওসি মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার ও এসআই আব্দুর রহিম নমিতা বণিকের কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকা ঘুস নেন। ২২ জুলাই কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দুই বাসিন্দা রুবেল মিয়াজি ও মোহাম্মদ ফেরদৌস চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়ার জন্য আখাউড়া ইমিগ্রেশনে আসেন। ফেরদৌস জানান, ওই সময় দায়িত্বে থাকা পুলিশের এসআই আব্দুর রহিম তাদের কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আব্দুর রহিম ভারতীয় ইমিগ্রেশনে কল করে তাদের পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে দেন। পরে তারা আগরতলায় পৌঁছলে সেখানকার ইমিগ্রেশন তাদের জানায়, আগে থেকেই তাদের তথ্য পাঠানো হয়েছে, তাই তাদের এন্ট্রি রিফিউজ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

তিনি আরও জানান, আখাউড়া ইমিগ্রেশনে ফিরে আসার পর আব্দুর রহিম তাদের গালাগাল করেন এবং পুনরায় মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। শেষে ৫ হাজার টাকা দিয়ে তারা ছাড়া পান।

তবে এসআই আব্দুর রহিমের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া এবং গালাগাল করার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ঢাকা কাস্টমস হাউজ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত এক যাত্রীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আখাউড়া ইমিগ্রেশন পার করিয়ে দেন দেলোয়ার। অভিযোগ রয়েছে, তিনি উপপরিদর্শক হাবিবের আইডি ব্যবহার করে ওই যাত্রীর পাসপোর্টে সিল দেন। পরে বেনাপোলে তিনি ধরা পড়লে বিষয়টি ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার ঘুসসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আগে কী হয়েছে তা আমি জানি না। তবে আমি যোগদানের পর থেকে সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে। কোনো যাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, যাত্রী হয়রানি ও ঘুস নেওয়ার এ রকম অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘুস-বাণিজ্যের অভিযোগ অনুসন্ধান করে পাওয়া গেলে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Lading . . .