বছর না যেতেই চান্দিনায় উন্নয়ন প্রকল্পে বেহাল
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভায় এখন আলোচনায় তিন প্রকৌশলীর দুর্নীতির সিন্ডিকেট। বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে বসে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হাসান, উপসহকারী প্রকৌশলী হাসান মঞ্জিল এবং খাইরুল ইসলাম সব উন্নয়ন প্রকল্প, কমিশন বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। স্থানীয়দের দাবি, এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে ফ্যাসিবাদের ঠিকাদার চক্র হাতিয়ে নিয়েছে উন্নয়নের কোটি কোটি টাকা। কাজে গাফিলতির কারণে বছর না পেরোতেই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বেহালে রূপ নিয়েছে।
সূত্র জানায়, সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ দুই বছর ধরে এ পৌরসভায় কর্মরত। এর আগে দুই বছর চাকরির পর অন্যত্র বদলি হয়ে আবার চান্দিনা চলে আসেন। পাঁচ বছর ধরে একই চেয়ারে আছেন উপসহকারী প্রকৌশলী হাসান। এক বছর আগে সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী খাইরুল। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন, ইস্টিমেট, ঠিকাদারদের কাজে সহায়তা, কৌশল বুঝিয়ে দেওয়া, এমবি বই তৈরি করা, কমিশন আদায় করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ বুঝে নেওয়াসহ সব দায়িত্ব পালন করছে এ সিন্ডিকেট।
বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, চান্দিনা পৌরসভার অধিকাংশ সড়ক এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা বেহাল। গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক চলাচলের অনুপযোগী।
এলাকাবাসী জানান, এক বছর আগে চান্দিনা উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে পালকি সিনেমা পর্যন্ত সড়কটি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকায় সংস্কার করা হয়। সংস্কারের তিন মাসের মধ্যেই সড়ক ভেঙে আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরেছে। পৌরসভার প্রকৌশল সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় যুবলীগ সভাপতি মনির খন্দকার সড়কটি সংস্কারের নামে কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। বিধি অনুসারে ১০% জামানত রাখার কথা থাকলেও মাত্র ৫% জামানত রাখা হয়েছে। এখন সেই জামানতের টাকাও তুলে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।
ওই সড়কের নূরে মদিনা মাদ্রাসার সামনে গিয়ে দেখা যায়, ব্লকগুলো ভেঙে গেছে। পানির ট্যাংক এলাকায় অনেক ব্লক ফাঁকা হয়ে গেছে। এসব স্থানে ভাঙা ইট আর বালু দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার কার্য সহকারী নাজমুল হাসান এবং ইসমাইল আলী দিনভর দাঁড়িয়ে থাকলেও কথা বলতে চাননি। বিধি মোতাবেক এত বড় প্রকল্পের কাজ দেখভালের দায়িত্ব সহকারী প্রকৌশলীর। কিন্তু তিনি নামকাওয়াস্তে সাইডে গেলেও কাজে অনেক অসঙ্গতির অভিযোগ আছে। মহারং এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, ইঞ্জিনিয়ারদের (প্রকৌশলী) সঙ্গে মিলেমিশে যুবলীগ নেতা মনির খন্দকার কমপক্ষে ১ কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন।
প্রকৌশলী সাজ্জাদ বলেন, এখানে আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। আমরা কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করি না। আরেক অভিযুক্ত প্রকৌশলী হাসান বলেন, এক বছরের মধ্যে সড়ক ভেঙে গেলে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জামানতের টাকা থেকে সংস্কার করা হবে। প্রকৌশলী খাইরুল ইসলাম বলেন, আমি এক বছর আগে এখানে এসেছি। নিয়মমাফিক কাজ করার চেষ্টা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, আমি প্রশাসক হওয়ার আগে যেসব অনিয়ম হয়েছে সেগুলো নিয়ে আমার কিছু করার নেই। বর্তমানে যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে কাজ বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। কোনো প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকেন কঠোর পদক্ষেপ নেব।