জামায়াতের হিন্দু শাখায় যোগ দিলেন ২৪ সনাতন ধর্মাবলম্বী
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৪ সনাতনী ধর্মাবলম্বী জামায়াতে যোগদান করেছেন। রোববার তারা প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অমুসলিম বা হিন্দু শাখায় যোগ দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াত কার্যালয়ে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লতিফুর রহমানের মাধ্যমে এক অনাড়ম্বরভাবে তারা যোগদান করেন।
তবে এই দিন যোগদানকারীদের মধ্যে একজন মুসলিম ব্যক্তিও রয়েছেন।
রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পায়। তবে জামায়াতের দায়িত্বশীল অনেক নেতৃবৃন্দ বিষয়টি অবগত নয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
যোগদানকারীরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা হলেন- সুমন কুমার সাহা, সুকুমার পরামানিক, সঞ্জিত কর্মকার, চন্দন দাস, সুদর্শন মণ্ডল, বহ্মানাথ ঠাকুর, কানাই চৌধুরী, ভরত চৌধুরী, জয় চৌধুরী, সতীশ মণ্ডল, বাবলু মণ্ডল, মিতু মণ্ডল, সুমন মণ্ডল, দোলন মণ্ডল, মন্টু লাল চৌধুরী, স্বপন ঘোষ, দর্শণ মণ্ডল, সুজন ভাস্কর, কৃষ্ণা চৌধুরী, তপন চৌধুরী, কালাচাঁন চৌধুরী, শঙ্কর চৌধুরী, স্বাধীন দাস, ঝড়ু চৌধুরী এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বী রহমত আলী। সবাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
সদ্য যোগদানকারী সুমন কুমার সাহা বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামীর অমুসলিম শাখায় যোগদান করেছি।
দেশে আরও অনেক দল থাকতে জামায়াতে যোগদানের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে এই দল থেকে বিপদে-আপদে অনেক সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। দীর্ঘদিন থেকে এই দলের কর্মকাণ্ড দেখেছি। তারা সবসময় ভালো কাজ করে। এছাড়া তারা আমাদের সনাতন ধর্ম পালনে কখনও বাধা দেননি। সব মিলিয়ে আমাদের মনে হয়েছে জামায়াত একটি আদর্শভিত্তিক দল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সাবেক এমপি লতিফুর রহমান জানান, শ্রী সুমন কুমার সাহার নেতৃত্বে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আমার মাধ্যমে দলে যোগদান করেছেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন পেশা ও মতের মানুষের মাঝে আমাদের দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ১১ ধারায় বলা হয়েছে- রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করলে সব ধর্মের মানুষ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করতে পারবে। আমি তাদের ইসলামের বিষয়ে কথা শোনানোর জন্য আমন্ত্রণ জানালে তারা এসেছিলেন। আমি তাদের বলেছি ইসলাম সার্বজনীন, ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্য নয়। কুরআন এসেছে মানুষের জন্য, শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য কুরআন আসেনি। এমন ব্যবস্থায় আমরা আছি যেটা আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একজন সৎ এবং যোগ্য লোকের দরকার। আপনাদের ধর্ম আপনারা পালন করবেন। ইসলাম বলে দিয়েছে- ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করিও না, অন্যের ধর্ম নিয়ে গালাগালি করিও না। এ কথাগুলো বললাম তারপর তারা দলে যোগ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এই দাওয়াতি কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুল আলীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। ফেসবুক দেখে বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিস্তারিত জেনে আপনাকে জানাতে পারব।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবু বাক্কার একই কথা জনিয়ে বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। আমি জেলার দায়িত্বশীল হলেও বিষয়টি আমি জানতে পারিনি। আমি একটু বাইরে ছিলাম, আমাদের না জানিয়ে লতিফুর ভাই বিষয়টি করেছেন, ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি।
জামায়াত সব কার্যক্রম দলীয়ভাবে করে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম করা যাবে, তবে এটি যেহেতু একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা সেহেতু আমাদের অবগত করে করলে ভালো হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির আবু জার গিফারির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
আরও পড়ুন