Advertisement

‘ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে’

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সুন্দরবনের গহিনে ফাঁদে আটকা পড়া হরিণ উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা। মঙ্গলবার হায়াতখালী টহল ফাঁড়ির আওতাধীন হেলাল খালের পাশেছবি: প্রথম আলো
সুন্দরবনের গহিনে ফাঁদে আটকা পড়া হরিণ উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা। মঙ্গলবার হায়াতখালী টহল ফাঁড়ির আওতাধীন হেলাল খালের পাশেছবি: প্রথম আলো

সুন্দরবনের কয়রা নদীর পাশে গহিন বনে শিকারির ফাঁদে আটকা পড়ে উল্টো হয়ে ঝুলছিল একটি হরিণ। পরে হরিণটিকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সুন্দরবনের হায়াতখালী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পিন্টু বাড়ৈ হরিণটিকে উদ্ধারের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সুন্দরবনের কয়রা নদীর পাশ ঘেঁষে সরু একটি খাল ঢুকে গেছে বনের গভীরে। নাম তার হেলাল খাল। ডিঙিনৌকায় খাল ধরে যত দূর সম্ভব এগোনো গেল, তারপর শুরু হলো হেঁটে টহল। চারদিকে শূলের মতো উঁচিয়ে থাকা শ্বাসমূল আর নানা গাছের কাঁটায় ভরা পথে হাঁটা এক যুদ্ধ। হঠাৎ নিস্তব্ধ বনে শোনা গেল হরিণের চিৎকার। ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে।’ ফাঁদ কেটে হরিণটিকে মুক্ত করতেই দৌড়ে চলে গেল বনের গভীরে।

বন কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবনে হরিণ শিকারের কৌশল নিষ্ঠুর। এক টুকরা শক্ত দড়ি, মাঝারি আকারের একটি গাছ বা গাছের ডাল দিয়ে তৈরি হয় ভয়ংকর ছিটকে ফাঁদ। শিকারিরা হরিণের চলাফেরার পথ চিহ্নিত করে সেখানে মাঝারি আকারের একটি গাছ কেটে সেই গাছের কাটা অংশের সঙ্গে দড়ির ফাঁদ টেনে বেঁধে রাখে। উপরিভাগে শুকনা পাতা ছড়িয়ে দেয়, যাতে ফাঁদ একেবারেই চোখে না পড়ে। নির্দিষ্ট জায়গায় হরিণ পা ফেললেই তীব্র বেগে দড়ির ফাঁস ছিটকে উঠে যায়, সঙ্গে গাছের কাটা অংশও টেনে নিয়ে শিকারকে ঝুলিয়ে ফেলে।

হরিণের ক্ষেত্রে বনের ভেতরে অপরাধ উদ্‌ঘাটনের তথ্য দেওয়ায় ২০ হাজার এবং বনের বাইরে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
ইমরান আহমেদ, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক

হায়াতখালী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পিন্টু বাড়ৈ বলেন, সুন্দরবনের হেলাল খাল আর পাশের বাইসার খালের আশপাশে হেঁটে তাঁরা গতকাল আরও প্রায় ৫০টি ছিটকা ফাঁদ উদ্ধার করেছেন।

হায়াতখালী টহল ফাঁড়িটি কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর, খোড়লকাঠি, হায়াতখালী ও তেঁতুলতলা গ্রামের পাশেই অবস্থিত। সুন্দরবনসংলগ্ন এসব গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, লোকালয়ের পাশে ছোট নদী পেরোলেই গহিন জঙ্গল। হরিণশিকারিরা জেলের ছদ্মবেশে মাছ ধরার জালের সঙ্গে ফাঁদ তৈরির দড়ি বনে নিয়ে যায়। তারপর বনে বসে হরিণ ধরার ফাঁদ তৈরি করে।

হরিণ শিকারের অভিযোগে কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান কয়রার মহেশ্বরীপুর এলাকার এক শিকারি। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বনের যেখানে কেওড়াগাছ বেশি, সেখানে হরিণ বেশি থাকে। ওই এলাকায় শিকারিরা ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) ইমরান আহমেদ বলেন, বন্য প্রাণী হত্যা ও পাচার রোধে শিকারিদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। হরিণের ক্ষেত্রে বনের ভেতরে অপরাধ উদ্‌ঘাটনের তথ্য দেওয়ায় ২০ হাজার এবং বনের বাইরে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

Lading . . .