Advertisement

প্রতিদিন করলার রস খেলে যে ১০টি উপকার পাবেন

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও চীনা চিকিৎসায় করলা ব্যবহার হয়ে আসছে হজমশক্তি বাড়াতে, রক্তে শর্করার ভারসাম্য রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে। আধুনিক গবেষণাও প্রমাণ করেছে এর বহুমুখী উপকারিতা। করলার রস ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, শরীরকে ডিটক্স করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। জেনে নিন করলার রসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।

১. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা সংস্থা বায়োমেড সেন্ট্রালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, করলার রস প্রাকৃতিকভাবেই শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করে। ভিটামিন সি, জিংক এবং ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়াই করতে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র‍্যাডিক্যাল কমায়, প্রদাহ কমায় এবং অসুস্থ হলে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে। নিয়মিত করলার রস খেলে, বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি ও কাশি কম লাগে।

২. হজমশক্তি বাড়ায় ও পেটফাঁপা দূর করে

করলার রস প্রাচীনকাল থেকেই হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। ফাইবার বা খাদ্য আঁশে সমৃদ্ধ বলে মলত্যাগ নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রাকৃতিক পাচন এনজাইম থাকে, যা খাবার দ্রুত ভেঙে শরীরের পুষ্টি শোষণ সহজ করে। যাঁরা প্রায়ই পেটফাঁপা, গ্যাস বা হজমজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা খাবারের আগে অল্প পরিমাণ করলার রস খেলে অন্ত্র শান্ত হবে, অস্বস্তি কমে এবং সামগ্রিক হজম স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে তিতা বলে অল্প অল্প করে শুরু করা ভালো।

৩. প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে সহায়ক

কঠোর ডায়েট ছাড়াই ওজন কমাতে চাইলে করলার রস হতে পারে এক সহায়ক সংযোজন। এতে ক্যালরি কম, তবে খাদ্য ফাইবার–সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকস বা নাশতা খাওয়া কমিয়ে দেয়।

করলার কিছু যৌগ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে, যা হঠাৎ শর্করা বেড়ে যাওয়া বা নেমে যাওয়া ঠেকায়। এতে প্রায়ই মিষ্টি খাবারের প্রবল চাহিদা তৈরি হয়। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি করলার রস চর্বি কমানোর গতি বাড়াতে পারে।

৪. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

করলার রসের সবচেয়ে পরিচিত উপকারিতা সম্ভবত রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্বাস্থ্য গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের (এনআইএইচ) গবেষণায় দেখা গেছে, এতে চারান্টিন, ভাইসিন ও পলিপেপটাইড-পি-এর মতো যৌগ আছে, যা ইনসুলিনের মতো কাজ করে এবং গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। তাই এটি প্রাকৃতিকভাবে রক্তে শর্করা সুষম রাখতে সহায়ক।

তবে আপনি যদি ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করেন, তাহলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া এড়াতে খাদ্যতালিকায় করলার রস যোগ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাধ্যমে কোষকে সুরক্ষা দেয়

অক্সিডেটিভ স্ট্রেস অকালে বুড়িয়ে যাওয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের সঙ্গে যুক্ত। করলার রসের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এই ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এনআইএইচের গবেষণা অনুযায়ী, ভিটামিন এ ও সি এবং পলিফেনল একসঙ্গে কাজ করে কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, শরীরের টিস্যু স্বাস্থ্যবান রাখে এবং সামগ্রিক প্রাণশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত করলার রস খেলে কিছু প্রদাহজনিত সমস্যার ঝুঁকিও কমে।

৬. লিভারকে ডিটক্স করে ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে

করলার রস পিত্ত উৎপাদন বাড়ায়, যা চর্বি হজমে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়ক। সুস্থ লিভার শুধু হজমশক্তি ভালো রাখে না, বরং মেটাবলিজম উন্নত করে এবং শরীরের শক্তি বাড়ায়। ফলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

৭. ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করে

করলার রস শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে ত্বককে পরিষ্কার রাখে; ত্বকের জ্বালা, লালচে ভাব ও ব্রণ কমায়। এ ছাড়া ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ করলার রস কোলাজেন উৎপাদনেও রাখে ইতিবাচক ভূমিকা। এতে ত্বক থাকে টান টান ও তারুণ্যদীপ্ত।

৮. ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে

এনআইএইচের নতুন কিছু গবেষণায় জানা গেছে, করলায় এমন উপাদান আছে, যা কোলন, লিভার ও স্তন ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে পারে। যদিও করলার রস ক্যানসারের ওষুধ নয়। তবে এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আর রোগ প্রতিরোধী শক্তি সব মিলিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

৯. অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিভাই রাল

করলার রসে এমন কিছু যৌগ আছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। যুগ যুগ ধরে করলার রস অন্ত্রের কৃমি দূর করতে এবং অন্ত্রের জীবাণুর ভারসাম্য উন্নত করতে ব্যবহার করা হয়।

১০. ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে

এনআইএইচের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, করলার রস ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে। রক্তসঞ্চালন উন্নত করা এবং প্রদাহ কমানোর মাধ্যমে এটি টিস্যুর মেরামত ও সুস্থতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। তবে এটি কখনোই চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং সম্পূরক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সবশেষে

করলার রস অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা, ডায়রিয়া বা রক্তে শর্করা অত্যধিক কমে যেতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিসের ওষুধ খাওয়া ব্যক্তিদের জন্য। অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি এড়িয়ে চলা উচিত। নিরাপদে গ্রহণের জন্য সপ্তাহে কয়েকবার ৩০-৫০ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে শুরু করা ভালো, পরে ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। এর তিতা স্বাদ প্রথমে মানিয়ে নিতে সময় লাগতে পারে, তবে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব।

সূত্র: এমএসএন

Lading . . .