Advertisement

এসব উপকারিতা জানলে আপনিও সাঁতার শুরু করবেন

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

সাঁতার কাটলে দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়েছবি: পেক্সেলস
সাঁতার কাটলে দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়েছবি: পেক্সেলস

সহজ ব্যায়াম হিসেবে হাঁটাহাঁটিই জনপ্রিয়। মাঝারি বা ভারী ব্যায়াম করতে পারলে জগিং, দৌড় কিংবা ওজন তোলার ব্যায়াম বেছে নেন অনেকেই। তবে কেবল ব্যায়াম হিসেবেই সাঁতার কাটছেন, এমন ব্যক্তির সংখ্যা এ দেশে তুলনামূলক কম। অথচ সাঁতার এমন এক ব্যায়াম, যা হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও দেহের বহু পেশির জন্য দারুণ। সাঁতারে ক্যালরি পোড়ে, তাই ওজন কমানোর জন্যও এই ব্যায়াম ভালো। মনের জন্যও সাঁতার ভালো ব্যায়াম। আর এই ব্যায়ামে চোট ও আঘাতের ঝুঁকি কম।

সাঁতার কাটলে দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ঠিকঠাক থাকে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। সাঁতারসংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার লেখক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের কার্ডিওভাস্কুলার এজিং রিসার্চ ল্যাবরেটরির পরিচালক হিরোফুমি তানাকা বলেন, ‘সাঁতারের সময় পুরো দেহ একটা নির্দিষ্ট ছন্দে চলে। এই ব্যায়াম হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়ায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।’
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালি অনমনীয় হয়ে পড়ার যে প্রবণতা দেখা যায়, সাঁতার কাটলে সেই প্রবণতা কমে। দেহের প্রদাহও সাঁতার কাটলে কমে। সাঁতারের সময় বাড়তে থাকা হৃৎপিণ্ডের গতির কারণে ফুসফুসকেও বাড়তি কাজ করতে হয়। এভাবে ফুসফুসের কার্যকারিতাও ঠিক থাকে।

ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও স্পোর্টস এক্সারসাইজ সায়েন্টিস্ট হিদার মাসির মতে, সাঁতরে সামনের দিকে যেতে দেহের বহু পেশির সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। হাত, বাহু, কাঁধ, ঘাড়, পা, পিঠ—সব জায়গার পেশিরই সঞ্চালন হয় এই ব্যায়ামে। তাতে পেশি দৃঢ় ও সুগঠিত হয়। অথচ দেখুন, এ জন্য আপনাকে ‘ঘাম ঝরাতে’ হচ্ছে না। বেশ কিছু গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে জানা যায়, জয়েন্টের ব্যথা কমাতে, জয়েন্টের জড়তা কমাতে, জয়েন্ট নমনীয় করতে, দেহভঙ্গি ঠিক রাখতে ও তারুণ্য ধরে রাখতে সাঁতার উপকারী।

সাঁতরে আপনি অনেকটা ক্যালরি পোড়াতে পারবেন। কে কতটা ক্যালরি পোড়াতে পারবেন, তা নির্ভর করে তাঁর ওজন ও সাঁতারের গতির ওপর। ১৫৫ পাউন্ড (৭০ কেজি) ওজনের একজন ব্যক্তি এক ঘণ্টা মাঝারি গতিতে সাঁতরে ২৮১ ক্যালরি পোড়াতে পারেন। তীব্র গতিতে ফ্রিস্টাইল সাঁতার কাটলে ওই ব্যক্তি এক ঘণ্টায় ৭০৪ ক্যালরি পোড়াতে পারবেন। বাটারফ্লাই স্ট্রোকে এক ঘণ্টায় তিনি ৭৭৪ ক্যালরি পোড়াতে পারবেন।

একাধিক গবেষণা থেকে জানা যায়, সাঁতার কাটলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে। সেরোটোনিন ও ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ে। তাই মন ভালো থাকে। হতাশা, অবসাদ, দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপ থেকে মুক্তি মেলে। সাঁতার কাটলে কারও কারও ঘুমও ভালো হয়। বাড়তে পারে স্মৃতিশক্তিও। হিরোফুমি তানাকা প্রায় ২০০ ব্যক্তির ওপর করা এক গবেষণা থেকে জানান, দাম্পত্য সম্পর্কের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে সাঁতার।

হৃদ্‌রোগ, ফুসফুসের সমস্যা, পেশি বা জয়েন্টের ব্যথা প্রভৃতি কারণে অনেকেই বিভিন্ন ব্যায়াম করতে পারেন না। কিন্তু সাঁতার কাটতে তাঁদের কোনো বাধা নেই। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরাও সাঁতার কাটতে পারেন। দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, ওজন তুলতে গিয়ে পেশি বা জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। কিন্তু সাঁতার কাটতে গিয়ে কারও পড়ে যাওয়ার বা এমন আঘাত পাওয়ার ভয় নেই। কেবল খিঁচুনি বা সিনড্রোমের মতো কিছু সমস্যায় একা সাঁতার কাটা বিপজ্জনক। এ ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই স্বাভাবিকভাবেই সাঁতার কাটতে পারেন।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Lading . . .