Advertisement

কৈশোরের মিষ্টি প্রেম ফিরিয়ে আনবে এই কোরীয় সিনেমা

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি
‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

গল্পের পটভূমি ১৯৯৮ সাল। তাই যাঁরা নব্বইয়ের দশকে বড় হয়েছেন, নিজেদের কৈশোরের মিষ্টি প্রেমের দিনে ফিরে যেতে চান, তাঁদের সিনেমাটি দেখতে ভালো লাগবে। গল্পে নতুন কিছু নেই। কোরিয়ান সিনেমার যাঁরা ভক্ত, তাঁদের কাছে জায়গাগুলোও হয়তো চেনা, তবু অনেক ‘গুরুগম্ভীর’ সিনেমার ভিড়ে এটি স্বস্তির অনুভূতি দেবে। হয়তো এ কারণেই নেটফ্লিক্সের অ–ইংরেজিভাষী সিনেমার তালিকায় এটি শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। কথা হচ্ছিল ১৯ আগস্ট নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া রোমান্টিক কমেডি সিনেমা ‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’ নিয়ে।

একনজরে
সিনেমা:
‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’
ধরন: রোমান্টিক কমেডি
পরিচালক: নামকুং সান
চিত্রনাট্য: জি চুন-হি, ওয়াং দু-রি
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
রানটাইম: ২ ঘণ্টা
অভিনয়: শিন ইউন-সু, গং মিউং, চা উ-মিন, ইয়ুন সাং–হিউন, কাং মি-না

প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মাতা নামকুং সানের প্রথম কাজ এটি। এর আগে নির্মাণ করেছেন ‘টাইম টু বি স্ট্রং’, ‘টেন মানথস’-এর মতো সিরিয়াস সিনেমা। সেই কাজগুলোও প্রশংসিত হয়েছে। পরিচালক নিজেই বলেছেন, গল্প যেহেতু আগে থেকেই তৈরি ছিল, তাই তিনি চিন্তামুক্ত হয়ে শুধু পরিচালনায় মনোযোগী হয়েছেন। কেমন হলো তাঁর এই সিনেমা?

হাইস্কুলের শেষ বর্ষে পড়ে পার্ক সে-রি (শিন ইউন-সু)। ছোটবেলা থেকেই মনে একটাই কষ্ট, তার চুল কোঁকড়া। আর এই চুল নিয়েই তার যত যুদ্ধ। শত চেষ্টা করেও চুল বাগে আনতে পারে না সে। আর এ কারণেই সে তার ক্রাশকেও জানাতে পারছে না মনের কথা। মনে তার একটাই দ্বন্দ্ব, শুধু এই চুলের জন্যই ক্রাশ হয়তো মেনে নেবে না তাকে। তবুও সে ও তার বন্ধুরা মিলে মনের মানুষকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যায়।

এদিকে বছরের মাঝামাঝি পার্ক সে-রিদের ক্লাসে আসে একটি নতুন ছেলে, ইউন-সক (গং মিউং)। ঘটনাক্রমে পার্ক সে-রির বন্ধু হয় সে। শেষ পর্যন্ত পার্ক সে-রি যখন নিজের ক্রাশকে মনের কথা বলতে যায়, তার মধ্যে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। কেন সেই দ্বন্দ্ব? পার্ক সে-রি কেন পারে না মনের কথা বলতে? শেষ পর্যন্ত পার্ক সে-রি কি খুঁজে পায় তার মনের মানুষকে? জানতে হলে দেখতে পারেন ‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’ সিনেমাটি।

সমুদ্রের পাড়ের শহর বুসানে চিত্রায়িত হয়েছে ‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’ সিনেমাটি। নির্মাতা সেই শহরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে একটুও কার্পণ্য করেননি। সিনেমার গল্পের সঙ্গে মিশে গেছে বুসানের সেই হাইস্কুল আর সমুদ্র। সে-রি আর ইউন-সকের রসায়ন পর্দায় দেখতে ভালো লাগে। কিশোর বয়সের আবেগ দুজনেই খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যদিও ইউন-সক চরিত্রে গং মিউংকে যেন অনেকটাই রাশভারী লাগছিল এখানে। তাঁর বদলে একটু কম বয়সী কাউকে নিলে চরিত্রের সঙ্গে আরেকটু মানানসই হতো হয়তো।

গল্পের মোড় যদিও অনেকটা অনুমেয় ও অন্য সিনেমায় আগেও দেখা গেছে, তাই এ ধরনের গল্পের সঙ্গে সব সময়ই দর্শক নিজেকে মেলাতে পারেন। সিনেমায় সে-রির বন্ধুদের মধ্যকার খুনসুটি, দুষ্টুমি দেখতেও ভালো লেগেছে। বন্ধু মানেই যে একে অন্যকে সমর্থন করে যাওয়া, সেই বিষয়টিও এখানে ফুটে উঠেছে খুব সুন্দরভাবে।

কিশোর বয়সের অনিশ্চয়তা এই সিনেমার মূল থিম। পার্ক সে-রির নিজেকে নিয়ে অনিশ্চয়তা, ধীরে ধীরে তার নিজেকে বোঝা এবং ওই বয়সের হুটহাট নানান সিদ্ধান্ত দেখতে বাস্তবসম্মত মনে হয়েছে। পার্ক সে-রির চরিত্র ঠান্ডা, ক্যালকুলেটিভ বা অস্বাভাবিকভাবে পরিণত না দেখিয়ে যেভাবে চঞ্চল ও স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তবে গল্পের শেষ দিক প্রথম দিকের তুলনায় অনেকটাই ক্লিশে।

এই সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফিও দারুণ। আবহসংগীতও মানানসই। গল্পের গতি সাবলীল, তাই একঘেয়ে লাগে না। তবে ‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’ সিনেমার আরেকটি আকর্ষণ দুটি অতিথি চরিত্র। এখানে দেখা যায় ‘স্কুইড গেম’, ‘গার্ডিয়ান: দ্য লোনলি অ্যান্ড গ্রেট গড’ অভিনেতা গং ইউকে। রয়েছেন জং ইউ-মি, যিনি অভিনয় করেছেন ‘লাভ ইয়োর এনিমি’, ‘দ্য স্কুল নার্স ফাইলস’-এর মতো সিনেমা ও সিরিজে।

ইদানীং ওটিটিতে আসা কোরিয়ান সিনেমায় অ্যাকশন আর মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতা থাকে। সেখানে থেকে বের হয়ে এসেছে সহজ একটি গল্প ‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’ সিনেমাটি। একটি কিশোরীর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের সঙ্গে একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প দেখানো হয়েছে এই সিনেমায়। খুব আলাদাভাবে মনে রাখার মতো সিনেমা না হলেও দেখতে বিরক্তও লাগে না। গল্পের মূল সুর খুব সরল।

কোনো অদ্ভুত টুইস্ট নেই, মারপ্যাঁচ নেই। হাইস্কুলভিত্তিক হওয়ায় এই মিনিমালিস্ট ধাঁচটিও খানিকটা সতেজ লাগে। সবচেয়ে বড় স্বস্তি, চিরচেনা স্কুল-বুলিংয়ের বহুল চর্চিত বিষয়গুলো এখানে নেই। তবে একে ‘লিটল ফরেস্টের’ মতো গভীর কিছু ভেবে নিলে ভুল করবেন। এটি নিছকই হাইস্কুলের প্রেমের গল্প। ছবিটি দেখার মতো হয়ে উঠেছে মূলত চরিত্র আর ১৯৯৮ সালের বুসানের সুন্দর আবহাওয়ার কারণে। শহরের সাগরপাড়ের নস্টালজিয়া গল্পটিকে বাড়তি মাত্রা দিয়েছে। দিন শেষে হালকা ধাঁচের মন ভালো করার মতো সিনেমা দেখতে চাইলে ওয়াচলিস্টে রাখতেই পারেন ‘লাভ আনট্যাঙ্গলড’।

Lading . . .