Advertisement

বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা

যুগান্তর

প্রকাশ: ৬ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

হামলা-ভাঙচুর ও লুটের কারণে ফাঁকা হয়ে গেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সদস্যদের ঘর-বাড়ি। পাড়াটিতে ১২টি বাড়ি থাকলেও সোমবার গিয়ে দেখা যায়, কেবল এক বৃদ্ধা ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় পড়ে আছে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র।

বারনই নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পুলের ওপর প্রায় পাঁচ বছর আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১২টি পরিবার ঘর তৈরি করে। এর মধ্যে সাতটি সাঁওতাল, চারটি ধাঙ্গড় (ওরাঁও) ও একটি রবিদাস সম্প্রদায়ের পরিবার। পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বারনই নদী। নদীর পরেই মো. বাবলু নামের এক ব্যক্তির জমি। তিনি বিএনপি করেন বলে জানা গেছে। তার জমির সামনের জায়গায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারগুলো বসবাস করায় তিনি আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। যদিও ওই জায়গা পাউবোর ।

গত বুধবার সকালে বাবলুর সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকদের হাতাহাতি হয়। এরপর দুপুর ও সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় পাড়াটিতে। এর পরপরই লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। সোমবার সকালে পাড়ায় গিয়ে শুধু হিমেন রবিদাসের বাড়িতে তার শাশুড়ি অমলা দাসীকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন ১৫ দিন আগে। হাঁটতে পারেন না বলে এখানেই রয়েছেন। অমলা বলেন, ‘কদিন আগে গণ্ডগোল হয়েছে। তারপর তো কেউ নাই। আমি চলতে পারি না, তাই আছি।’

পাড়ার পরবর্তী বাড়িগুলোতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কোথাও বিদ্যুৎ বিল ঝুলছে, কোথাও দরজা তালাবদ্ধ, কোথাও দরজা খোলা, তবে কেউ নেই। কোনো ঘরে বিছানায় মশারি টানানো, মেঝেতে পচে যাওয়া ভাত, আবার কোথাও টিনের ঘরে হামলার চিহ্ন রয়েছে স্পষ্ট।

পুলের ওপর দিয়ে একজন ভ্যানচালক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে পাড়ার কয়েকজন চোলাই (দেশি) মদ খাচ্ছিলেন। সেই সময় পাশের জমির মালিক বাবলু তাদের নিষেধ করলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এক নারী বাবলুর শার্টের কলার ধরে। এরপর বাবলুকে মারধর করা হয়। এরপর বাবলু লোকজন নিয়ে এসে দুই দফা হামলা করেন।

বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগম বলেছেন, তার স্বামী বাজারে গেছেন, তিনি শ্রমিকদের খাবার দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জমির সামনে বাড়ি করেছে, খুব অত্যাচার করে। মদ খেতে নিষেধ করায় আমার স্বামীকে মেরেছে। পরে আমার স্বামীও লোকজন নিয়ে আসে। কিন্তু কাউকে মারেনি। ওরাই ভয়ে পালিয়ে গেছে।’ ঘরবাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে ডলি দাবি করেন, ‘ওরা নিজেরাই ভেঙেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ এসে বলেছে, সাঁওতালরা থাকবে, কেউ কিছু বলবে না। এতই যদি দরদ হয়, তাহলে এদের নিয়ে গিয়ে বাড়ি করে দিক।’ মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় এই পাড়ার সর্দার শ্যামল মুর্মুর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে তারা গোদাগাড়ীর পাকড়ি এলাকায় থাকতেন। কৃষিকাজের জন্য বাগসারা এলাকায় আসতেন। দূরত্বের কারণে স্থানীয় কাউন্সিলরের পরামর্শে তারা এই জায়গায় ঘর তোলেন। হামলার পর যে যেদিকে পেরেছেন চলে গেছেন।

শ্যামল জানান, ‘ঘটনার দিন বাবলু পাড়ার এক নারীকে খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছিল। নিষেধ করায় সে ওই নারীকে মারে। তখন আমাদের যুবকরাও তাকে একটু মারে। এরপর বিকালে বাবলু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের তিনজনকে মারে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে শান্ত থাকার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই বাবলু আবার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে।’

পবা উপজেলার ইউএনও আরাফাত আমান বলেন, থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। সাঁওতালদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন

Lading . . .