Advertisement

দোকানদার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক মুকুল

কালবেলা

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

মোখলেসুর রহমান মুকুল। ছবি : কালবেলা
মোখলেসুর রহমান মুকুল। ছবি : কালবেলা

মুদি দোকানদার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক আত্মগোপনে থাকা রাজশাহীর ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমান মুকুলকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (৬ আগস্ট) ভোর ৬টার দিকে কক্সবাজারের সুগন্ধা বিচ পয়েন্ট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, এক দশক আগেও পাড়ায় মুদি দোকান চালাতেন মুকুল। এখন তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। তিনি মূলত বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন হুন্ডির কারবারে জড়িয়ে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গরু পাচার সিন্ডিকেটের হোতা এনামুলের সঙ্গে তার গভীর সখ্য ছিল। এলাকার লোকজন জানেন, ভারতে গরু পাচার সিন্ডিকেটকে ধরতে ধরপাকড় শুরু হলে এনামুল ১ হাজার কোটি রুপি পাঠিয়েছিলেন মুকুলের কাছে। এর অর্ধেক মুকুল পরে মেরে দেন বলেও জনশ্রুতি আছে।

এক সময় রাজশাহীতে ‘হুন্ডি মুকুল’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। তার বাড়ি রাজশাহী নগরের কাঁঠালবাড়িয়া গোবিন্দপুর মহল্লায়। ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে তৎকালীন পুলিশ প্রধানের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। ‘হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হওয়া প্রসঙ্গে দেওয়া ওই বিশেষ প্রতিবেদনে হুন্ডি কারবারিদের তালিকা ছিল। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই তালিকার রাজশাহীর সিন্ডিকেট প্রধান ও মূল হোতা অংশে ২ নম্বরে ছিল মুকুলের নাম।

তবে হুন্ডি মুকুলকে ছাতা হয়ে আগলে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রচার-প্রচারণায় এই মুকুলের দামি গাড়িই ব্যবহার করেন আসাদ। তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর মুকুল তাকে গাড়িটি উপহার দেন।

মুকুল তার কালো টাকা সাদা করতে ঠিকাদারি ব্যবসায় নাম লিখিয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের। তবে এসব কাজে তার লোকসান হওয়ার কথা বলেই মনে করেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। যদিও মুকুল দেখিয়েছেন লাভ।

আওয়ামী লীগের এমপি আসাদকে গাড়ি উপহার দিয়ে তিনি বাগিয়ে নিয়েছিলেন জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার একটি বালুমহাল। আওয়ামী সরকারের পতনের পর এবারও তিনি বালুমহালটি ইজারা পেয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা মুকুল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে বালুমহাল ইজারার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরও করেছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে রাজশাহীতে বিক্ষোভও হয়।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় রাজশাহীতে মোখলেসুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ভোরে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘মুকুলকে রাজশাহীর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় বুধবার দুপুরে তাকে কক্সবাজার আদালতে তোলা হয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’

Lading . . .