প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বগুড়া শহরে দত্তবাড়ি এলাকায় শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের অফিস কক্ষে ক্যাশিয়ার ইকবাল হাসানের (২৮) হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। পাম্পে তেল চুরির অপবাদ ও মারপিটের প্রতিশোধ নিতেই সেলসম্যান রাকিবুল ইসলাম রতন (২৫) ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের পর ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
বগুড়া ডিবি পুলিশ রোববার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। শনিবার রাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রতন হত্যার কথা স্বীকার করেছে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বোন সাদিয়া খাতুন সদর থানায় একটি মামলা করেন।
সোমবার সকালে ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু রায়হান এসব তথ্য দিয়েছেন।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার ভাই ইকবাল হাসান বগুড়া শহরের দত্তবাড়ি এলাকায় শতাব্দী ফিলিং স্টেশনে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করতেন। শাজাহানপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর মধ্যপাড়ার চাঁন মিয়ার ছেলে রাকিবুল ইসলাম রতন এখানে সেলসম্যান।
শনিবার রাত ২টা ৩৫ মিনিটে তার ভাই ইকবাল হাসান ফিলিং স্টেশনের অফিস রুমের টেবিলের ওপর ঘুমিয়েছিলেন। এ সময় রতন হাতুড়ি দিয়ে ১৫ সেকেন্ডে তার মাথায় অন্তত ১৩টি আঘাতে (সিসিটিভি ফুটেজ অনুসারে) মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করেন। এর পর চাকু ও রেঞ্জ দিয়ে পুনরায় আঘাতে হাসানের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর রতন নিহতের মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে সদর থানায় মামলার আগেই ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। রোববার রাত ৯টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ঘাতক রাকিবুল ইসলাম রতনকে গ্রেফতার করা হয়। তার হেফাজত থেকে নিহত ইকবাল হাসানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও পেট্রলপাম্প থেকে চুরি করা ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এর আগে পাম্প থেকে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা একটি চাকু ও রেঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে হাতুড়ি পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রাকিবুল ইসলাম রতন জানায়, ইকবাল হাসান ও সে একই পাম্পে চাকরি করে। হাসান বিভিন্ন সময় পাম্পের তেল নিয়ে অনিয়ম করতেন। ক’দিন আগে রতন বিষয়টি পাম্পের মালিককে অবহিত করলে হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে (রতন) চড়-থাপ্পর দেয়। এতে রতন ক্ষিপ্ত হয়ে হাসানকে শায়েস্তা করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাত ২টা ৩৫ মিনিটে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে অফিসে টেবিলে ঘুমন্ত ইকবাল হাসানের ওপর হাতুড়ি দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। মৃত্যু নিশ্চিত করে সে হাসানের মোবাইল ও তেল বিক্রির কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা সিআইডি পুলিশের ক্রাইম সিনের সদস্যরা নমুনা সংগ্রহ করেন। ফিলিং স্টেশন থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজে রতন ঘুমন্ত ইকবালকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাতে হত্যার দৃশ্য দেখা যায়। মাত্র ১৫ সেকেন্ডে হাতুড়ি দিয়ে ১৩টি আঘাত করা হয়। এরপর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত ইকবাল হাসান সিরাজগঞ্জ সদরের পিপুলবাড়িয়া বাজার এলাকার আবদুল করিমের ছেলে। তিনি গত প্রায় ৪ বছর ধরে বগুড়া শহরের দত্তবাড়ি এলাকায় শতাব্দী ফিলিং স্টেশনে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করতেন। এছাড়া তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নুপুর খাতুনকে নিয়ে শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
সোমবার দুপুরে বগুড়া ওসি ডিবি ইকবাল বাহার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাকিবুল ইসলাম রতন শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার ইকবাল হাসানকে হত্যার কথা স্বীকার ও এর কারণ প্রকাশ করেছে। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি না দিলে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মূল ঘাতক রাকিবুল ইসলাম রতনকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।