জমানো টাকার মাটির ব্যাংক সহপাঠীর মায়ের চিকিৎসায় তুলে দিল শিশুশিক্ষার্থীরা
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিশুশিক্ষার্থীরা তাদের জমানো টাকার মাটির ব্যাংক তুলে দিল সহপাঠীর মায়ের চিকিৎসার জন্য। আজ মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী পিতৃহারা স্বপ্না টুডুর হাতে এ টাকা তুলে দেয় সহপাঠীরা।
স্বপ্না টুডুর মা বাসন্তী হাসদা ছয় দিন ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি কিডনি, লিভার, রক্তস্বল্পতাসহ বেশ কিছু জটিল রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না পরিবারটির পক্ষে।
স্বপ্না টুডুর মায়ের পাশে দাঁড়াতে সবার সামনে মাটির ব্যাংকটি ভাঙা হয়। এক, দুই ও পাঁচ টাকার কয়েনের পাশাপাশি দুই থেকে ৫০০ টাকার নোট ছিল মাটির ব্যাংকটির ভেতর। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সেই টাকা গণনা করে। ঘটনাটি জানতে পেরে শামিম হোসেন নামে একজন পথচারীও ভালো কাজে অংশ নিতে ৫০০ টাকা দিয়ে যান। মোট টাকা গুনে হিসাব করে স্বপ্না টুডুর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই টাকার পরিমাণ ২৩ হাজার। সহপাঠীকে সহযোগিতা করতে পেরে শিক্ষক–শিক্ষার্থী সবাই খুব খুশি। তারা ভালো এ উদ্যোগটি চলমান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
টাকা পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বপ্না টুডু বলে, ‘আমার বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য পাশে দাঁড়াল, এটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আমারও টাকা আছে এই ব্যাংকে। কিন্তু এ টাকা যে আমার মায়ের জন্য পাব, তা কখনো ভাবিনি। কয়েক দিন থেকে অনেক কষ্টের মধ্যেও আজ আমার একটু ভালো লাগছে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। সবাইকে ধন্যবাদ। এটা আমাদের স্কুলে চালু থাকবে।’
একই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বক্তব্য দেয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিরজন সরেন। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহারিমা খাতুন বলে, স্বাস্থ্যসেবা মাটির ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের জমানো টাকা সহপাঠীর মায়ের চিকিৎসায় দিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। অনেক দিন থেকে এই টাকা জমানো হয়েছে। এ সময় অসুস্থ বাসন্তী হাসদার ননদ ও গ্রামের নারী নেত্রী রুমালী হাসদা, গ্রাম্য মোড়ল চানু হাসদা, রাজেন হাসদা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক আবুল হায়াত (শাহিন), বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের এ মহতী উদ্যোগ দেখে তাঁদের খুব ভালো লাগছে। এটি শিক্ষার্থীদের মানবিক দিক প্রকাশ করে। তারা বড় হয়ে ভালো ও মানবিক মানুষ হয়ে উঠুক। আজকের এ টাকার বাইরে বাসন্তীর চিকিৎসার জন্য হয়তো আরও অর্থ প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর বলেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের একটি ভালো উদ্যোগ স্বাস্থ্যসেবা মাটির ব্যাংক। তিনি উদ্যোগটি নিতে উৎসাহিত হয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী-পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ সম্পর্কিত কার্যক্রম দেখে। তারা একবার সিলেটের বন্যার্তদের জন্য বন্ধুসভার ত্রাণ তহবিলে তাদের মাটির ব্যাংকটি তুলে দিয়েছিল। আলোর পাঠশালার শিশুদের এ মাটির ব্যাংকে প্রতি বৃহস্পতিবার টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে শিক্ষার্থীরা জমা দেয় টাকা। শিক্ষকেরাও সেই মাটির ব্যাংকে জমা দেন টাকা। উদ্দেশ্য, দরিদ্র সহপাঠীদের মধ্যে কেউ বা তাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য সেই মাটির ব্যাংকের টাকা তুলে দেওয়া। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে আগত অতিথিরাও এ উদ্যোগটির কথা জানতে পেরে কিছু সহায়তা করে থাকেন। এ উদ্যোগ চলমান থাকবে।