রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা, আছেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও
প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকায় নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের শাস্তিপ্রাপ্ত নেতা-কর্মী ও অনেক সাবেক শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাতে রাকসুর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভোটার তালিকা প্রকাশিত হলে বিষয়টি সামনে আসে।
গত ১২ ডিসেম্বর বিভিন্ন সময়ে র্যাগিং, ছাত্র আন্দোলনে হামলা, সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৩৩ জনকে নানা মেয়াদে শাস্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় স্থায়ী বহিষ্কৃত হওয়া ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ শাস্তিপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার রায়কে মাদার বখ্শ হলের খসড়া ভোটার তালিকার ১৪৬ নম্বর সিরিয়ালে ও মাদার বখ্শ হল ছাত্রলীগের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ মিশকাত হাসানের নাম হলের ৪৪৭ নম্বর সিরিয়ালে দেখা গেছে। তবে তাঁদের দুজনকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের তিন নেতার নামও খসড়া ভোটার তালিকায় এসেছে। বিজয়-২৪ (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ৩৮১ নম্বর সিরিয়ালে, নবাব আবদুল লতিফ হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা ১৮৫ নম্বর ও ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল্লাহ আত তাসরিফের নাম শাহ মখদুম হলের ৩৫৩ নম্বর সিরিয়ালে এসেছে। এ ছাড়া এক বছরের শাস্তিপ্রাপ্ত আলফি শারিন আরিয়ানার নাম রোকেয়া হলের ৫৭৯ নম্বর সিরিয়ালে আছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাস ছেড়ে দেওয়া অনেক ছাত্রলীগ নেতার নাম খসড়া ভোটার তালিকায় এসেছে।
গত ১২ নভেম্বর স্নাতকোত্তরের ফলাফল প্রকাশিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া মেশকাত চৌধুরীর। তবে প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ২২৪ নম্বর ভোটার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক আগেই আমার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা না। যেহেতু অভিযোগ করার সময় আছে, তাই সমাধান করা হবে আশা করছি।’ এ ছাড়া খসড়া তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক সাবেক শিক্ষার্থীর নাম এসেছে।
রাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেআইনি ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে একাডেমিক প্রোগ্রাম থেকে স্থগিত করা হয়েছে এমন শিক্ষার্থীরা সদস্যপদ লাভের যোগ্য হবেন না।’
এদিকে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অনেক শিক্ষার্থী বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ইনস্টিটিউটের পঞ্চম থেকে অষ্টম ব্যাচের যাঁরা হলে সিট বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁরা ব্যতীত অন্য শিক্ষার্থীদের নাম আসেনি।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর নির্বাচন কমিশন আমাকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর তালিকা পাঠাতে বলে। আমি তালিকা প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়েছি।’
সার্বিক বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই তালিকাগুলো হল প্রশাসন, রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং আইসিটি সেন্টার থেকে দিয়েছে। এখন রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যাঁরা ভোটার হতে পারবেন না, তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দেব। কোনো অছাত্র বা বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে ভোটার তালিকায় রাখা হবে না। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগেই আমরা এটি সংস্কার করব।’