সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫
-68add7ffa8213.jpg)
নাটোরে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) শাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) কর্মরত কারিগরি প্রশিক্ষক এক নারীকে যৌন হয়রানি, অশালীন কথাবার্তা বলা ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে এ ধরনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ঘটনা তদন্তে পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) রাশেদুল কবীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সরেজমিন বিষয়টি তদন্ত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা। নাটোর সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শিশু পরিবারে কর্মরত কারিগরি প্রশিক্ষক মোছা. মাকসুদা খাতুন ৩ জুলাই জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) শাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি লিখিত আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় থেকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পাবনা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে (ডিডি) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাকসুদা খাতুনকে শাহাদৎ হোসেন মাঝে মধ্যেই দিনে-রাতে মোবাইল ফোনে অশালীন কথাবার্তাসহ ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কথা বলার সময় ওই কর্মকর্তা নানাভাবে যৌন হয়রানিমূলক এবং অনেক আপত্তিকর কথাবার্তাসহ বাজে ইঙ্গিত দেন, উত্ত্যক্ত করেন । বারবার নিষেধ করলেও শাহাদ ৎ হোসেন তাতে কর্ণপাত করেননি । শাহাদ ৎ তার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তার যথাযথ বিচার চান তিনি।
অভিযুক্ত নাটোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) শাহাদৎ হোসেন এ অভিযাগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে হেয়প্রতিপন্ন করা ও ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
নাটোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন ।
মঙ্গলবার বিকালে তদন্ত কর্মকর্তা ও পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ( ডিডি ) রাশেদুল কবীর বলেছেন , সোমবার সারাদিন তিনি এ বিষয়ে তদন্ত করেছেন । সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন । আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন । উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন ।
এদিকে সমাজসেবা কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান , জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ( এডি ) শাহাদ ৎ হোসেন ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল নাটোর শহরের ভবানীগঞ্জ এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে এক নারী সহকর্মীকে নিয়ে পুলিশের হাতে আটকও হয়েছিলেন ।
আটক ওই নারী সহকর্মী সেই সময় জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের টেকনিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে কর্মরত ছিলেন ।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় কর্মরত অবস্থায়ও তিনি নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন । এছাড়া সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় সমাজসেবা অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালে ৫ মে রোগী কল্যাণ তহবিলের অর্থ ৩৫ জন লোকের অনুকূলে বরাদ্দ দেখিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করা , মহিলা কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলা , কর্মচারীদের গায়ে হাত তোলাসহ মুক্তিযোদ্ধা ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ প্রমানিত হয়।
সেই সময় এসব ঘটনায় তৎকালীন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সরকারি শিশু পরিবারের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তার জানা ছিল না। তবে যেহেতু অভিযোগ হয়েছে, সেটার তদন্ত চলছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।