Advertisement

শেখ হাসিনার গৃহীত ‘প্রাণবিনাশী’ প্রকল্পগুলো এই সরকার অব্যাহত রেখেছে: আনু মুহাম্মদ

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়লাখনি–বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার নিমতলা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়লাখনি–বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার নিমতলা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা যে মহাপরিকল্পনার অধীনে প্রাণবিনাশী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করেছিলেন, এই সরকার সেগুলো বাতিল না করে অব্যাহত রেখেছে। আমরা শেখ হাসিনার গৃহীত চুক্তিগুলো জনগণের সম্মুখে প্রকাশ ও বাতিলের কথা বলেছি। কিন্তু তাঁর সব বিপজ্জনক প্রকল্প, জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি এই সরকার গ্রহণ করছে।’

মঙ্গলবার দুপুরে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার নিমতলায় ‘ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। এর আগে সকাল ১০টায় কয়লাখনি–বিরোধী আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক র‌্যালি করা হয়। এরপর স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, ফুলবাড়ীতে কয়লা উত্তোলনের জন্য এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সরকারের চুক্তির পর পরিবেশ ও জনজীবনে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় গঠিত হয় ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটি। ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির কার্যালয় অভিমুখী কর্মসূচিতে তৎকালীন বিডিআরের গুলিকে তিনজন নিহত হন। এ সময় আহত হন দুই শতাধিক আন্দোলনকারী।

‘ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস’ উপলক্ষে আজ আয়োজিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নেতা মোশাররফ হোসেন, ফুলবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহমুদ আলম, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সিপিবির ফুলবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক প্রমথেশ শীল প্রমুখ।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্দর। এর ওপর দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে। শেখ হাসিনা সেই বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর মতো এই সরকারও টেন্ডার ও জনগণের সম্মতি ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোম্পানির হাতে গেলে দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার যদি সত্যিই সংস্কার চাইত, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াত। এশিয়া এনার্জিসহ টাউট-বাটপার কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করত। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো ছিল সংস্কারের প্রধান কাজ। সরকার তা না করে সেটা বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘সরকারের মধ্যে থাকা কিছু লোকের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, তাঁরা বিদেশি কোম্পানির লবিস্ট হিসেবে সরকারে আছেন। বিদেশি কোম্পানির লবিস্ট সরকার চালালে যে রকম সিদ্ধান্ত হয়, এখন অনেক সিদ্ধান্ত ঠিক সে রকমই হচ্ছে। এটা হওয়ার কথা ছিল না। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে প্রত্যাশা ছিল একটা বৈষম্যহীন দেশ হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ চলবে, জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি কিংবা প্রকল্প হবে না। জনগণের সম্মতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। কিন্তু সরকার সেদিকে নজর রাখছে না, চলছে উল্টো দিকে। সে জন্য নীরব থাকা বা এদের ওপর ভরসা করা যাবে না।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীর জন্য ফুলবাড়ী আন্দোলন একটি বড় ঘটনা। যেখানে জনগণ অপ্রতিরোধ্য শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, জীবন দিয়ে একটা বিদেশি কোম্পানির ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করেছে। এই আন্দোলন উন্নয়ন সম্পর্কে মানুষকে একটা দিশা দিয়েছে। মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে, সম্পদ ধ্বংস করে যদি কোনো উন্নয়ন হয়, সেটাকে উন্নয়ন প্রকল্প বলা যাবে না। উন্নয়ন মানে কিছু পরিবর্তন, যার মধ্যে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে, শিক্ষা-চিকিৎসার সুযোগ বাড়বে এবং প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ ভালো হবে।

এ সময় ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিসহ বাংলাদেশের সব জায়গায় প্রাণবিনাশী প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান আনু মুহাম্মদ। দাবিগুলো পূরণ না হলে আগামী অক্টোবর মাসে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথাও জানান তিনি।

Lading . . .