দেশ গণতন্ত্রের রেললাইনে উঠে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন থেমে থাকবে না: তারেক রহমান
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন আমরা যত সহজ ভাবছি, তত সহজ নয়। আজ এই কাউন্সিল অধিবেশনে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, যতক্ষণ পর্যন্ত এই দেশে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ গণতন্ত্রের লাইনে উঠে না আসে, মানে গণতন্ত্রের রেললাইনে উঠে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন থেমে থাকবে না।’
আজ সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তারেক রহমান। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বড় মাঠে আয়োজিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে দেশে যদি এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যে পরিস্থিতিতে দেশে অরজকতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকতে পারে; যে পরিস্থিতিতে পলাতক স্বৈরাচার ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হতে পারে; তবে দেশ, দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ভালো হবে না।’
দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কর্মীদের কাছে একটা বিষয় আমি তুলে ধরতে চাই, কোথাও হয়তো কেউ কেউ কিছু করার চেষ্টা করছে, যার মাধ্যমে জনগণের প্রস্তাবিত গণতন্ত্রের যাত্রা ব্যাহত হতে পারে। তাই আপনাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আপনাদের প্রত্যেককে সচেতন থাকতে হবে। বিগত দিনে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপনারা যেভাবে জনগণকে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন, সেই কাজ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার কাজটি আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’
বিএনপিকে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের ওপর দায়িত্ব হলো, গণতন্ত্রের প্রতি যেকোনো হুমকিকে অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে। তবে সেই পদ্ধতিতে, যে পদ্ধতি জনগণ সমর্থন করে। অবশ্যই আমরা এমন কোনো পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব না, যেটাতে জনগণের শান্তি–শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।’
তারেক রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালে লাখ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে হাজারো মানুষের আত্মদান ও লাখ লাখ মানুষ অত্যাচারিত–নির্যাতিত হয়েছে, তারপরও থেমে থাকেনি গণতন্ত্র পুনঃ উদ্ধারের আন্দোলন। সেই গণতন্ত্রের ফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে।’
এদিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে। আজ যখন সমগ্র জাতি উন্মুখ হয়ে আছে একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করার, গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার, ঠিক তখনই এই ষড়যন্ত্রগুলো শুরু হয়েছে।’
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান মির্জা ফখরুল। এরপর তিনি নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়নি। আপনারা সব সময় সজাগ ও সচেতন থাকবেন। প্রতিমুহূর্তে আমাদের সতর্ক থেকে জনগণের যে আশা–প্রত্যাশা; অর্থাৎ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার, সেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারমান শামসুজ্জামান দুদু, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক ও আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।