Advertisement

লক্ষাধিক জনগণকে সেবা দেন ৭ চিকিৎসক

কালবেলা

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

কুড়িগ্রামের চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি : কালবেলা
কুড়িগ্রামের চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি : কালবেলা

কুড়িগ্রামের চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৪ পদের স্থলে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৭ চিকিৎসক। এই সাত চিকিৎসক দিয়েই চলছে এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এটি ৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩/৪ শত রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। ডাক্তার না থাকায় ফার্মাসিস্ট, স্যাকমো উপসহকারী ও কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে দায় সারাভাবে চালানো হচ্ছে রোগীদের চিকিৎসা। এতে করে ভেঙে পড়েছে এখানকার স্বাস্থ্যসেবা।

জানা গেছে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালে এ হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল নেই এখানে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ৪৩ চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র ৭ চিকিৎসক দিয়ে চলছে এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। অপরদিকে প্রশাসনিক কর্মচারীও রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। প্রতিদিন জরুরি বিভাগে দেড় থেকে দুশজন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী প্রায়ই কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

এদিকে ময়লাযুক্ত বিছানাপত্র, ওয়াডের্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ফলে রোগীরাও স্বাভাবিকভাবে হাসপাতালে থাকতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে অনেক রোগীকে বাড়ি থেকে বিছানাপত্র এনে থাকতে হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নানা অভিযোগ সেবার মান নিয়ে প্রশ্নতো আছেই। তার উপর হাসপাতালের সার্বিক পরিবেশ নোংরা থাকার কারণে রোগী ও স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। খাবারের মান নিয়েও রয়েছে অভিযোগ।

বুধবার (৬ আগস্ট) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, খাবার তালিকায় মাংস থাকলেও দেওয়া হয়েছে পাঙাশ মাছ। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে রোগীদের। এ নিয়ে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হলে পরবর্তীতে দেখা হবে বলে জানানো হয়।

অপরদিকে সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, আমাদের উপজেলার হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় অবস্থা দীর্ঘদিন থেকেই খারাপ। কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযোগ করার পরও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। দিন দিন স্বাস্থ্যসেবার মান ভেঙে পড়ছে। তারা আরও বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এলে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাছাড়া মাঝেমধ্যে ওষুধপত্র পাওয়া যায় না। সব অসুখের চিকিৎসায় প্যারাসিটামল, নাপা, স্যালাইন এগুলো দিয়ে থাকে। কিন্তু কোনো অ্যান্টিবায়োটিক অথবা ভালোমানের ওষুধ দেয় না, আমাদের সেগুলো বাইরে থেকেই কিনতে হচ্ছে।

উপজেলার কাঁচকোল থেকে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, আমি গত ১৫ দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি। প্রথম দুদিন দুটি ইনজেকশন দিয়েছিল। এরপর আমাকে বাকি ওষুধ ও ইনজেকশন বাইরে থেকেই কিনতে হয়েছে। আর পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় দিনে একবার শুধু রাউন্ড দেন ডাক্তার।

জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক উপসহকারী মেডিকেল অফিসার আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকের ব্যাপক সংকট লেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে জ্বরসহ নানা ধরনের রোগী আসছেন। পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই দ্রুত পর্যাপ্ত ডাক্তারের ব্যবস্থার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।

চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবু রায়হান কালবেলাকে বলেন, হাসপাতালটিতে অধিকাংশ ডাক্তার, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।এরপর যতটুকু পারি চেষ্টা করছি লোকজনদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তার সংকটের বিষয়টি লিখিত ও মৌখিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে আশা করি এ বছরই এ সংকট কাটিয়ে উঠবে।

Lading . . .