Advertisement

চরাঞ্চলের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আজ মঙ্গলবার সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা অফিসার্স ক্লাব হলরুমেছবি: প্রথম আলো
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আজ মঙ্গলবার সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা অফিসার্স ক্লাব হলরুমেছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা ও নির্বাচনের প্রচার–প্রচারণায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। নির্বাচনে পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করে ভোটারদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে দ্রুত গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রামে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবিগুলো উঠে আসে। বক্তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সংসদীয় আসনে নারী আসন বৃদ্ধি, যুব প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষের স্বার্থ রক্ষার সুপারিশ করেন।

কুড়িগ্রাম জেলা সদরের উপজেলা অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে বেলা ১১টা থেকে জেলা পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় একশনএইডের নেতৃত্বে সুশীল প্রকল্পের অধীনে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘উদয়াঙ্কুর সেবা সংস্থা (ইউএসএস)’ এ বৈঠকের আয়োজন করে। এ আয়োজনের প্রচার সহযোগী হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।

বিএনপির ৩১ দফায় নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর মর্যাদার কথা বলা আছে উল্লেখ করে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান বৈঠকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমাদের দল নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়নে নারীদের জন্য সুযোগ রাখবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে চরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু ও যুবসমাজের প্রতিনিধি আরও বাড়ানো হবে।’

সরকার যে সময়েই নির্বাচন দিক, জামায়াতে ইসলামী অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলের কুড়িগ্রাম জেলার আমির মাওলানা আবদুল মতিন ফারুকী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি খারাপ কালচার আছে, নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে অন্য দলের প্রার্থীদের ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে কথাবার্তা বলি। এটা নির্বাচন কমিশন আইন করে বন্ধ না করলে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা তৈরি হবে।’

পিআর বা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনে পেশিশক্তি ও কালোটাকার ব্যবহার হয়। এতে সব ভোটারের ভোটের মূল্যায়ন থাকে না। এ ছাড়া ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাচন হলে ব্যক্তি পেশিশক্তির ব্যবহার করে। তাই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতি জরুরি।’

বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মোজাহিদ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নেতা–কর্মীদের মুখে নারী, পুরুষ, চরাঞ্চল ও সংখ্যালঘু সমতা নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা শোনা যায়। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গুড গভর্ন্যান্স। যখন একটি রাষ্ট্রে গুড গভর্ন্যান্স থাকবে, তখন সংখ্যালঘু, নারী–পুরুষ সবাই সমান হবে। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশ হতে চাই।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা সমন্বয়ক ফুলবর রহমান বলেন, ‘ধনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ দিন দিন কোটিপতির ক্লাবে পরিণত হচ্ছে। গত জাতীয় নির্বাচনে ২০ হাজার টাকায় প্রার্থী নমিনেশন দাখিল করা গেলেও এ বছর ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে নির্বাচনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। নির্বাচন ধনিক শ্রেণিদের হাতে চলে যাচ্ছে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যক্ষ নুর বখতও পিআর পদ্ধতির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আজ যুবকেরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আমরা মনে করি, প্রতিটি দলে অন্ততপক্ষে ২০ শতাংশ যুবকদের অংশগ্রহণের জন্য সংরক্ষিত রাখা উচিত। পিআর পদ্ধতি নিয়ে আমাদের দল বরাবর মনে করে, কোনো দল যাতে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য আমাদের মতো দেশের জন্য পিআর পদ্ধতি বেশি জরুরি।’

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, শুধু সেনাবাহিনীর ওপর ভরসা করে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে নাজুক রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে তারপর নির্বাচনের আয়োজন করা হলে সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শাকিলা শারমিন বন্যা বলেন, ‘সনাক সঠিক সময়ে স্বচ্ছ ও কারচুপিমুক্ত অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে। ভোটকেন্দ্র দখল করে কারচুপি করে অন্যের ভোটাধিকার হরণ করা, সহিংসতা সৃষ্টি বন্ধ করতে হবে। ভোট গ্রহণের সঙ্গে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের নিরপেক্ষ হতে হবে। অন্যথা ২০২৪ সালের ছাত্র–জনতার আন্দোলনের এত রক্ত, এত ত্যাগ সব বিফলে যাবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি শুধু কাগজে–কলমে না থেকে জনগণের কল্যাণে বাস্তবমুখী হতে হবে বলে মত দেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা আহ্বায়ক খাইরুল আনাম। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি রওশন আরা বেগম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলে অন্তত ৩০ শতাংশ নারীদের পদ রাখার দাবি করে আসছি। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে নারীদের জন্য অতিরিক্ত ১০০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বের দাবি রাখছি।’

জেলা যুব প্ল্যাটফর্মের সদস্য কলি রানী আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুব প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দলের প্রচার–প্রচারণায় কাগজের ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার–প্রচারণা চালানো, গাছে পেরেক ঠুকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ ও উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে প্রচারণা বন্ধের দাবি জানান।

বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আরিফুল হক ও কুড়িগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সফি খান। তাঁরা বলেন, কুড়িগ্রাম নদ–নদীময় একটি জেলা। এই জেলায় অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। সব রাজনৈতিক দলকে এ জেলার প্রান্তিক মানুষের সমস্যার কথা বিবেচনায় রেখে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সাজানো ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা দরকার।

বৈঠকের শুরুতে নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলোর দেওয়া জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশাবিষয়ক সুপারিশমালা পাঠ করেন বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলোর মোর্চা ‘হাব’–এর সভাপতি সাইদা ইয়াসমিন। এর আগে প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একশনএইডের কাজী মোরশেদ আলম।

Lading . . .