Advertisement

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে, নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন অনেকে

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বুধবার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ি এলাকায়ছবি : প্রথম আলো
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বুধবার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ি এলাকায়ছবি : প্রথম আলো

ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীতীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১০ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। গতকাল সকাল ৯টায় নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ৫২ দশমিক ২০ মিটার ওপর দিয়ে। আজ সকাল ৯টায় পানি প্রবাহিত হয় ৫২ দশমিক ৩০ মিটার দিয়ে।

তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাতীরবর্তী ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে আছে বিস্তির্ণ এলাকার রোপা আমন চারা।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরস্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারেরচর, খোকারচর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ তিস্তাপারের বিভিন্ন চরের প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন। গত দুই দিন ডুবে আছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি।’

টেপাখড়িবাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তায় পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এতে ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রাম ও দক্ষিণ খড়িবাড়ি গ্রামের আংশিক এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে ছয় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নদীর কয়েকটি চ্যানেল বের হয়ে আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। অনেকে গোবাদি পশু নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢল নেমে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯টায় আরও ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।

কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ওপরে

কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদের পানি বেড়েছে। এসব নদ-নদীতীরবর্তী অঞ্চলের নিম্নভূমির অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দুধকুমার নদের পানি নাগেশ্বরী উপজেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নদীর পানি বাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন নদ-নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। নাগেশ্বরী উপজেলার দুধকুমার নদের অববাহিকার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ফান্দেরচর, বন্ধুবাজার, টাপুরচর, রায়গঞ্জ উপজেলার চর দামালগ্রাম, চর লুচনি ও কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ঢেপঢেপি, নামাপাড়া, কৃষ্ণপুর এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হাতিয়া পয়েন্টে ১ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের চর দামালগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে দুধকুমার নদের পানি বাড়তে শুরু করছে। গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত পানি বাড়তে বাড়তে উঠানে চলে এসেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে গরু-ছাগল নিয়ে খুব বিপদে পড়তে হবে।

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাত থেকে উজানের ঢলে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ইউনিয়নের নদী পাড়ের কয়েকটি চর প্লাবিত হয়েছে। ফান্দেরচর, টাপুরচরসহ আশপাশের চরাঞ্চলের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী পরিবারের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

Lading . . .