লাইনচ্যুত ট্রেন উদ্ধারে এসে রিলিফ ট্রেনও লাইনচ্যুত
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

কুড়িগ্রাম-চিলমারী রেলপথে একদিনে লাইনচ্যুত হয়েছে দুটি ট্রেন। রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে রমনা লোকাল ট্রেনটি উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায় চিলমারীর বালাবাড়ি রেলস্টেশনের উত্তরে লাইনচ্যুত হয়।
পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় লালমনিরহাট থেকে ওই ট্রেন উদ্ধারে আসা রিলিফ ট্রেনটিও উলিপুরের পাঁচপীর রেলস্টেশন পার হওয়ার পর লাইনচ্যুত হয়।
ট্রেন দুটির পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন ঘটনা দুটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রমনা লোকাল ট্রেনের পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, পার্বতীপুর থেকে চিলমারীর রমনা স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনটি বালাবাড়ি স্টেশনের কাছাকাছি রসুলপুর এলাকায় পৌঁছলে গার্ড ব্রেকের বগির চারটি চাকা লাইনের বাইরে চলে যায়। ট্রেনটি দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে রমনা স্টেশন থেকে রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
তিনি আরও জানান, উলিপুরের পাঁচপীর স্টেশন থেকে চিলমারী পর্যন্ত রেললাইনে কোথাও পাথর নেই। ফলে ট্রেন ঘণ্টায় মাত্র ১২ কিলোমিটার গতিতে চালানো হলেও লাইনচ্যুত হয়।
অপরদিকে রিলিফ ট্রেনের পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, সাতটি বগি নিয়ে লালমনিরহাট থেকে রওনা দেওয়া উদ্ধারকারী ট্রেনটি পাঁচপীর ও উলিপুর স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় পৌঁছেই লাইনচ্যুত হয়। পরে সন্ধ্যায় রিলিফ ট্রেনটি পুনরায় লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে এটি উলিপুর স্টেশনে অবস্থান করছে।
রোববার বিকালে সরেজমিন পাঁচপীর রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ রেলপথে কোথাও পাথর নেই। পুরো রেলপথ মাটির ওপর দিয়ে বিছানো। অনেক জায়গায় স্লিপার মাটির নিচে দেবে গেছে। কোথাও কোথাও রেললাইনের নিচের জমি থেকে মাটি এনে ফেলা হলেও গাইড ওয়ালের অভাবে মাটি বৃষ্টির পানিতে নিচে নেমে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেল সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তি জানান, পাঁচগাছী স্টেশন থেকে রমনা স্টেশন পর্যন্ত রেলপথটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে গতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটারে সীমিত করা হলেও স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। জরুরি সংস্কার না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
লালমনিরহাট রেল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেলপথ সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিশ্বাস কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পেলেও এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও রেললাইন, স্লিপার বা পাথর বসানোর কাজ শুরু হয়নি। শুধু কিছু মাটি ভরাট ও কয়েকটি সেতু মেরামত করা হয়েছে। ফলে রেলপথটি ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে।
বিশ্বাস কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার রুবেল মিয়া বলেন, স্লিপার সংকটে রেলপথ সংস্কার কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। তবে আগামী মাসে কিছু স্লিপার আসার কথা রয়েছে। সেগুলো পেলে দুর্গাপুর থেকে উলিপুর পর্যন্ত রেলপথের কাজ শেষ হবে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলম সন্ধ্যায় বলেন, চিলমারী রমনা বাজার স্টেশন রেলপথটি সংস্কারের কাজ চলছে। সেখানের রেললাইনের পাথর সরিয়ে স্লিপার বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। রেলপথ প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এই রেলপথ আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল উপযোগী হবে।