Advertisement

দিনাজপুরে সাদা শাপলার বিল, দেখতে শত শত মানুষের ভিড়

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খিয়ারমামুদপুর গ্রামের সাদা শাপলার বিল। এটি দেখতে দূর–দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেনছবি: প্রথম আলো
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খিয়ারমামুদপুর গ্রামের সাদা শাপলার বিল। এটি দেখতে দূর–দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেনছবি: প্রথম আলো

বিলের জলের বুক চিরে এগিয়ে চলছে কাঠের নৌকা। দুই পাশে যত দূর চোখ যায়, বিলের শান্ত জলে মাথা উঁচু করে শোভা ছড়ানো সাদা রঙের শাপলা দেখা যায়। শত শত দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন, ছবি তোলেন, ভিডিও করেন।

সাদা শাপলার এই বিলের অবস্থান দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খিয়ারমামুদপুর গ্রামে। নৌকায় বসে একদিকে তাকালে বিল–সংলগ্ন প্রতিবেশী ভারতের সীমান্ত। আর হাত বাড়ালেই জলে ভাসা শাপলা। আছে শালুকও। স্থানীয়দের অনেকে বিলে থাকা সেই শালুক তুলে নিয়ে যান।

বিশাল এ বিলের মাঝখানে আছে দ্বীপসদৃশ সমতলভূমি। সেখানে স্থানীয় জেলেরা মাছ সংরক্ষণ ও বিশ্রাম নেওয়ার জন্য টিনের ছাউনির নিচে বাঁশের টং তৈরি করেছেন। বিলে শাপলা দেখতে গিয়ে ওই বাঁশের টংয়ে জমে উঠছে স্থানীয় শিল্পীদের গানের আড্ডা।

বিলে শুধু শাপলা আর শালুক না; আছে কই, মাগুর, টাকি, পুঁটিসহ নানা মাছ। প্রতিদিন ভোরে স্থানীয় জেলেরা বিলে মাছ ধরেন এবং বিলের পাড়ে বিক্রি করেন। বিলে শাপলা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা কেউ কেউ পছন্দের ছোট মাছ কিনে বাড়ি ফেরেন।

স্থানীয়দের মতে, প্রায় ৬০০ বিঘা আয়তনজুড়ে এ বিলের পশ্চিম অংশের নাম আমরুল বিল। আর পূর্ব অংশের নাম কাললা বিল। বর্ষায় পানি কমে গেলে এ বিলে আমন ধান চাষ করেন স্থানীয় কৃষকেরা। আমন ধান কাটার পর পরিত্যক্ত বিশাল আয়তনের পশ্চিম পাশের জমিতে আমরুল নামে প্রচুর পরিমাণে একধরনের আগাছা জন্মে। আর পূর্ব পাশের জমিতে কাললা (হলদে মুথা) আগাছা জন্মে। এ কারণেই এমন নামকরণ হয়েছে।

বর্ষাকালে বিলপাড়ের স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরার পাশাপাশি নৌকা চালিয়ে বাড়তি আয় করেন। সেখানকার বাসিন্দা ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মুরাদ (১০) এই বিলে সকালে ও বিকেলে নৌকা চালায়। আলাপচারিতায় মুরাদ জানায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে প্রায় ৯টা আর বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা শাপলা ফুল দেখতে আসেন। নৌকায় দুজন বা চারজনকে নিয়ে পুরো বিল ঘুরে দেখায় সে। প্রতি ট্রিপে ১০০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া পায়। কেউ বিলে বেশিক্ষণ ধরে ঘুরলে ৩০০ টাকা ভাড়া দেয়। সকালে সে স্কুলে যায়। স্কুল ছুটির পর বিকেলে আবারও সে বিলে নৌকা চালায়।

শাপলা দেখতে আসা রাশেদুজ্জামান শাওন বলেন, বিলের দক্ষিণ পাশে ভারত সীমান্ত। বিলের মাঝখানে একটি ছোট জঙ্গল। দূর থেকে দেখে সেটিকে দ্বীপের মতো মনে হয়। সেখানে আছে বাঁশের টং। আর বিলে আছে অসংখ্য শাপলা ও শালুক। তাঁরা বন্ধুরা মিলে শাপলা দেখতে এসেছেন। সত্যি অসাধারণ!

বিলে নৌকায় চড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্থানীয় কণ্ঠশিল্পী আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকা থেকে অনেকে ঘুরতে সিলেট, কক্সবাজার ও টাঙ্গুয়ার হাওরে যায়। অথচ আমাদের বাড়ির পাশেই যে এত সুন্দর একটি জায়গা আছে, তা আমার জানা ছিল না। প্রশাসন যেন বিলটিকে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়।’

বিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সালমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খিয়ারমামুদপুর গ্রামে শাপলার বিলটির নাম শুনেছি। বিল ও শাপলা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা যেন প্রকৃতির ক্ষতি না করে, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আমি খুব শিগগিরই শাপলা বিল পরিদর্শন করব। প্রয়োজনে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।’

Lading . . .