Advertisement

রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধশত

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া

রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। তবে অ্যানথ্রাক্সের কারণে ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

তবে ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ একটি দল গতকাল শনিবার রংপুরে আসেন। আজ রোববার তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন।

মারা যাওয়া দুজন হলেন উপজেলার পীরগাছা ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক (৪৫) ও পারুল ইউনিয়নের আনন্দী ধনীরাম গ্রামের কমলা বেগম (৬০)।


পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত প্রথম আলোকে বলেন, অ্যানথ্রাক্সের বিষয়টি বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। মাসখানেক আগে কিছু গবাদিপশুর শরীরে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয় ও মারা যায়। ওই গবাদিপশুর মাংস কাটাকাটি করা থেকে অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। পরে প্রাণিসম্পদ বিভাগ নমুনাগুলো পরীক্ষা করে গত সপ্তাহে জানিয়েছে, মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। যে রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ জন রোগী অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন এই কর্মকর্তা।

তবে পীরগাছা সদর, তাম্বুলপুর, ছাওলা ও পারুল ইউনিয়নে ঘুরে অন্তত অর্ধশত রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা কেউ চিকিৎসাধীন, কেউ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা বলছেন, দুই মাস আগে উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিভাগ সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা যান উপজেলার পীরগাছা ইউনিয়নের তালুক ইসাত গ্রামের ভ্যানচালক আবদুর রাজ্জাক (৪৫)।

রাজ্জাকের স্ত্রী ফেনসী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর চাচা শ্বশুর মুকুল মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটি জবাই করে আবদুর রাজ্জাককে কাটাকাটির জন্য ডাকা হয়। মাংস কাটাকাটির সময় রাজ্জাকের একটি আঙুল কেটে যায়। পরে বিকেল থেকে রাজ্জাকের জ্বর শুরু হয়। একই সঙ্গে হাত, কানের নিচে ও বুক ফুলে যায়। তিন দিন পর রাজ্জাক রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আনন্দ ধরিরাম গ্রামের সিরাজুল ইসলামের একটি অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। এই অসুস্থ গরুর মাংস কাটাকাটি ও খাওয়ার কারণে সিরাজুলের স্ত্রী রাজিয়া (৪৫), ভাতিজা ফেরদৌস, ভাতিজার স্ত্রী রিয়া মনি এবং পাশের গ্রামের ৮ থেকে ১০ জন অসুস্থ হন। তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা দেখা দেয়। এর মধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর কমলা বেগমকে (৭০) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

কমলা বেগমের নাতি সুমন মিয়া বলেন, তাঁর দাদি ছাড়াও বাবা দুলাল হোসেন ও তাঁর আড়াই বছরের ছেলে আসাদুজ্জামান একই সঙ্গে অসুস্থ হন। তাঁদের বাড়ি থেকে ওই গরুর মাংসের নমুনা নিয়েছিল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। কয়েক দিন আগে তাঁরা এসে ওই মাংস পুঁতে রাখেন ও খেতে নিষেধ করেছেন।

ওই গ্রামের জব্বার আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সবাই আতঙ্কে আছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

পীরগাছা সদর ইউনিয়নের নগরজিৎপুর গ্রামে গিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাঁদের গ্রামের মোন্নাফ ও খলিলের বাড়িতে অসুস্থ গরু জবাই করে গ্রামে বিতরণ করা হয়। এই মাংস খেয়ে ওই পরিবারসহ সাত থেকে আটজন অসুস্থ হন। পীরগাছার দেউতি, পূর্ব পারুল, আনন্দী ধনীরাম, কদমতলা, শঠিপাড়া গ্রাম ঘুরে জানা যায়, গত ২ মাসে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে তিন শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে।

তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা একরামুল হক মণ্ডল গবাদিপশুর মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অ্যানথ্রাক্স ঠেকাতে মাঠপর্যায়ে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স রোগ নির্মূলে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অসুস্থ গবাদিপশু জবাই না করতে উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

Lading . . .