প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় লাভসিকনেস কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়। তাই এ কথা বলার উপায় নেই যে লাভসিক ব্যক্তিমাত্রই অসুস্থ।
তবে বিশেষজ্ঞরা একে নিতান্ত সাদামাটা এক দুঃখবিলাস হিসেবেও দেখছেন না। জীবনধারায় বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে লাভসিকনেস। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই।
প্রেমের অনুভূতির সঙ্গে মস্তিষ্কের নানা রাসায়নিক ক্রিয়া–বিক্রিয়া জড়িয়ে থাকে। বিশেষত ডোপামিন, সেরোটোনিন আর নরঅ্যাড্রেনালিনের কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
ধরা যাক, আপনি কাউকে ভালোবাসলেন। কিন্তু মনের কথা প্রকাশ করতে পারলেন না তাঁর কাছে।
এদিকে আপনার মনের ভেতর তাঁকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। কিংবা আপনি তাঁকে ভালোবাসার কথা জানালেও তিনি হয়তো আপনাকে গ্রহণ করলেন না।
অথবা দুজন দুজনকে ভালবাসলেও পারিবারিক বা সামাজিক কারণে প্রেমের সম্পর্কে থাকতে পারলেন না। অথবা ভুল–বোঝাবুঝির জন্য সম্পর্ক ভেঙে গেল।
পরিস্থিতি যেটিই হোক, আবেগগত কিংবা শারীরিকভাবে যদি তাঁর কাছাকাছি থাকার সুযোগ না পান, আপনার মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক।
এই অবস্থায় ডোপামিন, সেরোটোনিন আর নরঅ্যাড্রেনালিনের মতো রাসায়নিকগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই দেখা দেয় শারীরিক প্রভাবও।
এসব রাসায়নিকের ভারসাম্য নষ্ট হলে আপনি এমন কাজ করে বসতে পারেন, যা আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও আদতে অস্বাভাবিক। যেমন—
আপনি ভালোবাসার মানুষের বাড়ির সামনে অতিরিক্ত সময় কাটাতে পারেন।
প্রত্যাশা করতে পারেন, হয়তো একটা ফোনকল, নিদেনপক্ষে একটা খুদে বার্তা আসবে তাঁর তরফ থেকে।
হতাশাও গ্রাস করতে পারে আপনাকে।
কাজের সময় মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ভুগতে পারেন বাড়তি দুশ্চিন্তায়।
হতে পারে ঘুমের সমস্যাও।
প্রিয়জনের কথা ভেবে হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যেতে পারে।
অস্থিরতায় ভুগে নিজের দায়িত্বে অবহেলা করতে পারেন কেউ কেউ।
মজার ব্যাপার হলো, কারও কারও মধ্যে আবার অতিরিক্ত আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাবও সৃষ্টি হয়।
অল্প কিছু ক্ষেত্রে আবার একটু ভিন্ন ব্যাপার ঘটতে দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। এটা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।
যাঁকে ভালোবাসেন, তাঁকে কাছে না পেলেই যে আপনি লাভসিকনেসে ভুগবেন, তা কিন্তু নয়। বরং যাঁরা মানসিক অস্থিরতায় থাকেন, লাভসিকনেসের ঝুঁকি তাঁদেরই বেশি।
ছোটখাটো বিষয়ে হতাশ বা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়া কিংবা ভালোবাসার মানুষের মুঠোফোন চেক করার মতো কাজ করার প্রবণতা থাকে লাভসিক মানুষদের।
লাভসিকনেস কোনো রোগ না হলেও এর কারণে একজন ব্যক্তির জীবন ওলট–পালট হয়ে যেতে পারে।
তবে অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
তাই লাভসিকনেসের লক্ষণ দেখা দিলে নিজের প্রতি যত্নশীল হোন।
ভাবনার গতি ঘুরিয়ে দিন অন্যদিকে।
নিজের জীবনের দায়িত্বের বিষয়ে সচেতন হোন।
শরীরচর্চা করুন।
সৃজনশীল এবং সেবামূলক কাজে যুক্ত হোন।
যিনি আপনার হলেন না, তাঁর কাছে বারবার যাবেন না। তাতে আপনার আরও বেশি খারাপ লাগবে।
সূত্র: ওয়েবএমডি
আরও পড়ুন