Advertisement

চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা

জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা
চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা

মুজিজা হলো এমন অলৌকিক নিদর্শন যা আল্লাহ তাআলা তার নবিদের দান করেন যেন মানুষ বুঝতে পারে, তিনি আল্লাহ তাআলার নবি বা বার্তাবাহক হওয়ার যে দাবি করছেন, তা মিথ্যা নয়। যেমন আল্লাহ তাআলা তার নবি মুসাকে (আ.) লাঠির মুজিজা দান করেছিলেন। তিনি তার হাতের লাঠিটি ছেড়ে দিলে তা ভয়ালদর্শন সাপে রূপান্তরিত হতো। আল্লাহ তাআলার নবি ঈসা (আ.) আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় মৃতকে জীবিত করতে পারতেন। জন্মগত অন্ধত্ব দূর করতে পারতেন। দুরারোগ্য কিছু রোগ সারিয়ে তুলতে পারতেন। আল্লাহ তাআলা মুজিজা হিসেবে তাকে এই ক্ষমতা দান করেছিলেন।

আল্লাহ তাআলা তার শেষ নবি মুহাম্মাদকেও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু অলৌকিক নিদর্শন বা মুজিজা দান করেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল চাঁদ বিভাজিত বা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়ার ঘটনা। আল্লাহর ইচ্ছায় নবিজির (সা.) নবুয়্যতের প্রমাণ হিসেবে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল। মক্কার মানুষ চোখের সামনে স্পষ্ট দেখেছিল চাঁদ দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গেছে, চাঁদের দুই খণ্ডের মধ্যে হেরা পাহাড়ের চূড়া দেখা যাচ্ছে।

এই ঘটনা ঘটেছিল হিজরতের আগে। মক্কার কাফেররা নবিজির (সা.) কাছে এমন একটি নিদর্শন দাবি করেছিল যা নবিজির (সা.) নবুয়্যতের সত্যতা প্রমাণ করবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার মক্কাবাসী আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে কোনো নিদর্শন দেখতে চাইল, তখন তিনি চাঁদের দুটি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যাওয়া দেখালেন, মক্কাবাসী দেখলো চাঁদ বিভাজিত হয়ে হেরা পাহাড়ের দুই দিকে চলে গেছে এবং চাঁদের দুই খণ্ডের মাঝে হেরা পাহাড় দেখা যাচ্ছে। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে চাঁদ দুটি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল; চাঁদের একটি খণ্ড ছিল পাহাড়ের ওপরে, আরেকটি পাহাড়ের নিচে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাকো। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, আমি হেরা পাহাড়কে চাঁদের দুই খণ্ডের মধ্যে দেখেছিলাম।

এই মুজিজা কেয়ামতের আলামতসমূহেরও অন্যতম। হাদিসে এসেছে, কেয়ামতের আলামতসমূহের মধ্যে পাঁচটি ইতোমধ্যেই সংঘটিত হয়ে গেছে। সেগুলো হলো, মক্কা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হওয়া, চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়া, রোমানদের বিজয়ী হওয়া, কাফেরদের প্রবলভাবে পাকড়াও ও ধ্বংস হওয়া। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

কোরআনে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা ‘কেয়ামত ঘনিয়ে এসেছে’ এই বক্তব্যের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, কেয়ামত ঘনিয়ে এসেছে এবং চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। (সুরা কামার: ১)

মক্কার কাফেররা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার এই মহানিদর্শন দেখেও ইমান আনেনি। বরং এটাকে তারা জাদু বলে অভিহিত করে। সুরা কামারের দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের এ অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আর তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এ তো এক অব্যাহত জাদু। (সুরা কামার: ২)

ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার মুজিজা এক মহানিদর্শন যা পূর্ববর্তী নবিগণের কোনো মুজিজার সঙ্গে তুলনীয় নয়। কারণ এটি এই পৃথিবীর সীমার বাইরে আকাশমণ্ডলে ঘটেছিল। এটা ছিল নবিজির (সা.) নবুয়্যতের সত্যতার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

কিছু আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, চাঁদের পৃষ্ঠে ফাটল ও বিভাজনের চিহ্ন রয়েছে যা থেকে বোঝা যায় চাঁদ কখনও বিভাজিত হয়েছিল। এই তথ্য জানার পর কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের চারপাশে এমন সব নিদর্শন ছড়িয়ে রেখেছেন যা তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করে, মানুষকে তার কালাম ও দ্বীনের সত্যতা বুঝতে সাহায্য করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, বিশ্বজগতে ও তাদের নিজদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এই কোরআন সত্য; তোমার রবের জন্য এটাই যথেষ্ট নয় কি যে, তিনি সকল বিষয়ে সাক্ষী? (সুরা ফুসসিলাত: ৫৩)

সূত্র: ইসলাম ওয়েব

Lading . . .