Advertisement

নবি মুসার (আ.) দৃঢ় তাওয়াক্কুল

জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

নবি মুসার (আ.) দৃঢ় তাওয়াক্কুল
নবি মুসার (আ.) দৃঢ় তাওয়াক্কুল

আল্লাহর ওপর ভরসা বা নির্ভরতা আল্লাহর ওপর ঈমানের অংশ। যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ ঈমান রাখে, আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাস করে, সে যে কোনো কাজে, বিপদ-আপদে ও সুখে-দুঃখে আল্লাহর ওপরই ভরসা করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই একজন মুমিনের আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য আল্লাহর ওপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল। আল্লাহ তাআলা বলেন, মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ইমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে। (সুরা আনফাল: ২)

আরেক আয়াতে সব কাজে আল্লাহর ওপর ভরসা করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহর উপর ভরসা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালবাসেন। যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন তবে তোমাদের উপর বিজয়ী কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাদের লাঞ্ছিত করেন তবে কে এমন আছে যে, তোমাদেরকে এর পরে সাহায্য করবে? আর আল্লাহর ওপরই যেন মুমিনরা ভরসা করে। (সুরা আলে ইমরান: ৫৯, ৬০)

বিভিন্ন সময় পৃথিবীতে আল্লাহর সম্মানিত যে নবিরা আল্লাহর দ্বীন প্রচার করেছেন, আল্লাহর দিকে মানুষকে ডেকেছেন, আল্লাহর ওপর তাদের ভরসা ও নির্ভরতার বহু দৃষ্টান্ত এসেছে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে। হজরত মুসা (আ.) তাদের অন্যতম।

আল্লাহর নবি মুসা (আ.) আল্লাহ তাআলার ওপর সত্যিকার তাওয়াক্কুলের বা ভরসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। যখন তিনি ও বনি ইসরাইলের মুমিনরা ফেরাউনের শত্রুতা ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মিশর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ফেরাউন ও তার সৈন্যরা তাদের তাড়া করে, ছুটতে ছুটতে এক পর্যায়ে হঠাৎ তারা দেখেন তাদের সামনে লোহিত সাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা আর পেছনে ফেরাউনের বিশাল সেনাবাহিনী। সমুদ্র পার হওয়ার কোনো উপায় তাদের কাছে নেই, অন্য কোনো দিকে সরে যাওয়ারও সুযোগ নেই।

এ অবস্থায় ভয় হজরত মুসার (আ.) সঙ্গীরা ভাবেন, আর কোনো উপায় নেই, তারা ধরা পড়ে যাবেন। হতাশ গলায় তারা মুসাকে (আ.) বলেন, আমরা তো ধরা পড়ে গেছি!

কিন্তু আল্লাহর ওপর হজরত মুসার (আ.) ভরসা ছিল অটল ও সুদৃঢ়। তিনি পূর্ণ আস্থার সঙ্গে জবাব দেন, কখনোই না, আমার রব আমার সঙ্গে আছেন, তিনি অবশ্যই পথ দেখাবেন। এবং আল্লাহ তাআলা পথ দেখান। তিনি মুসাকে (আ.) নির্দেশ দেন তার হাতের লাঠি দিয়ে সমুদ্রের বুকে আঘাত করতে। মুসা (আ.) সমুদ্রে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে সরে যায়, মাঝে রাস্তা তৈরি হয়। মুসা (আ.) ও তার সঙ্গীরা নিরাপদে সমুদ্র পার হয়ে যান আর ফেরাউনের দলবল তাদের পিছু নিতে গিয়ে সমুদ্রে ডুবে মরে।

নবি মুসার (আ.) দৃঢ় তাওয়াক্কুল

নবি মুসার (আ.) দৃঢ় তাওয়াক্কুল

পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় এই ঘটনার বর্ণনা এসেছে। সুরা শুআরায় আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি মুসাকে আদেশ করলাম যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হয়ে যাও, নিশ্চয় তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে।

ফেরাউন শহরে শহরে সৈন্য সংগ্রাহকদেরকে পাঠালো (এই বলে যে,) নিশ্চয় এরা (বনি ইসরাইল) ক্ষুদ্র একটি দল। তারা আমাদের যথেষ্ট রাগিয়ে দিয়েছে এবং আমরা সবাই সদা সতর্ক একটি দল।

আমি ফেরআউনের দলকে তাদের বাগ-বাগিচা, ঝর্ণাসমূহ, ধন-ভান্ডার ও মনোরম স্থানসমূহ থেকে থেকে বের করে আনলাম। এভাবেই ঘটেছিল, আমি বনি ইসরাইলকে এসব কিছুর উত্তরাধিকারী করে দিয়েছিলাম।

সুর্যোদয়ের সময় তারা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা যে ধরা পড়ে গেলাম। মুসা বলল, কখনোই নয়, আমার সাথে আছেন আমার রব, তিনি আমাকে পথ বলে দেবেন।

আমি মুসাকে নির্দেশ দিলাম, তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত কর। ফলে, তা বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ হয়ে গেল। আমি সেখানে অপর দলটিকে (ফেরাউনের দল) পৌঁছে দিলাম। আর আমি মুসা ও তার সঙ্গীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম, অন্য দলটিকে নিমজ্জত কললাম। (সুরা শুআরা: ৫২-৬৬)

Lading . . .