Advertisement

কবরের ফলকে কোরআনের আয়াত লেখা যাবে?

জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

কবরের ফলকে কোরআনের আয়াত লেখা যাবে?
কবরের ফলকে কোরআনের আয়াত লেখা যাবে?

কবর সংশ্লিষ্ট ফলক বা দেয়ালে কোরআনের আয়াত লেখা নাজায়েজ। এতে কোরআনের সম্মানহানী হয়। কবরের ফলক ও দেয়ালে কবিতা, স্তুতিবাক্য, হাদিসের বাণী ইত্যাদি লেখাও নিষিদ্ধ।

জাবের (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবর পাকা করা, তার ওপরে লেখা, কবরের ওপর বাড়ি নির্মাণ করা এবং তা পদদলিত করা থেকে নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিজি)

তবে কবর চেনার জন্য কোনো চিহ্ন দেওয়া যায় বা নামফলক লাগানো যায়; যেটাতে নাম-পরিচয় লেখা থাকবে। কবর চেনার প্রয়োজনে কবরে চিহ্ন দেওয়া নিষিদ্ধ নয়। হাদিসে এসেছে, উসমান ইবন মাজউনের (রা.) ইনতেকালের পর তার জানাজা ও দাফন শেষে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরের চিহ্ন রাখার জন্য জনৈক সাহাবিকে একখণ্ড পাথর আনার নির্দেশ দেন। তিনি সেটি বহন করতে পারছিলেন না। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেটি নিজে আনার জন্য অগ্রসর হন, তার দুহাতের জামার আস্তিন গুটিয়ে ফেলেন এবং পাথরটি বয়ে নিয়ে এসে ওসমানের (রা.) শিয়রে রেখে বলেন, আমার ভাইয়ের কবর চিহ্নিত করলাম, আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে এই কবরের পাশে দাফন করবো। (সুনানে আবু দাউদ)

কবরস্থানে গেলে শরিয়তের যেসব বিধিনিষেধ মনে রাখতে হবে

কবর জিয়ারত করা, কবরস্থানে গিয়ে মৃত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করা সুন্নাত ও সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) মাঝে মাঝেই সাহাবিদের কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করতেন, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতেন।

কবরস্থানে গিয়ে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ ও শরিয়ত-নিষিদ্ধ কাজকর্ম ঠেকাতে একবার রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত করতে পারো। কারণ কবর জিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা)

তবে কবরস্থানে গেলে শরিয়তের বিধিনিষেধগুলোও মনে রাখতে হবে। কবরস্থানে গিয়ে কবরে সেজদা করা, কবরে থাকা ওলি বা দরবেশের কাছে কিছু চাওয়া, কবরে থাকা ব্যক্তির জন্য প্রাণী উৎসর্গ করা ইত্যাদি শিরক ও গর্হিত পাপ। এ ছাড়া কবরস্থানে আরও কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো,

১. কবরের ওপর বসা

কবরের ওপর বসা নিষেধ। এটা আদবের খেলাফ। রাসুল (সা.) বলেছেন, কবরের ওপর বসার চেয়ে উত্তম হলো আগুনের ওপর বসা যে আগুন কাপড় পুড়িয়ে দিয়ে চামড়া পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেবে। (সহিহ মুসলিম)

২. কবরের ওপর জুতো পরে হাঁটাহাঁটি করা

কবরের ওপর জুতো পরে হাঁটাহাঁটি করা নিষিদ্ধ। বশির ইবনে খাসাসিয়া (রা.) বলেন, আমি একবার রাসুলের (সা.) সাথে হাঁটছিলাম। তিনি মুসলমানদের একটি কবরস্থানে গিয়ে বললেন, এরা বহু মন্দ কাজ পরিত্যাগে অগ্রগামী হয়েছে, তারপর মুশরিকদের একটি কবরস্থানে গিয়ে বললেন, এরা বহু মঙ্গলময় কাজ পরিত্যাগে অগ্রগামী হয়েছে। তারপর তিনি অন্যদিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, এক ব্যক্তি জুতা পায়ে কবরস্থানের মাঝখানে হাটাহাটি করছে। তিনি বললেন, হে জুতা পরিধানকারী, জুতা ফেলে দাও। (সুনানে নাসাঈ)

৩. কবরের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা

কবরের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কবরের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করবে না এবং কবরের ওপর বসবেও না। (সহিহ মুসলিম)

৪. কবরস্থানে পশু জবাই করা

জাহেলি যুগে আরবরা কবরে পশু জবাই করতো। নবিজি (সা.) কবরে এ রকম পশু জবাই করতে নিষেধ করেন। (সুনানে আবু দাউদ)

৫. কবরস্থানে হাসি-তামাশা করা

কবরস্থানে গিয়ে হাসি-তামাশা ও উল্লাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিয়ো না এবং কবরগুলোকে উৎসবের জায়গা বানিয়ো না। (সুনানে আবু দাউদ)

Lading . . .