অমুসলিম প্রতিবেশী ও সহকর্মীর সঙ্গে যেভাবে মিশবেন
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম জাতির নবী ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি পুরো মানবজাতির জন্যও রহমত ও দয়ার আধার ছিলেন। তার দয়া ও মমতা ছিল সীমাহীন। মুসলিম-অমুসলিম, জিন, পশু-পাখি এমনকি জড়বস্তু—সবাই তার দয়া ও রহমত লাভ করেছিল। যারা তাকে কষ্ট দিয়েছে বা হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের প্রতিও তিনি করুণা দেখিয়েছেন। তাদের সঙ্গেও সহনশীল ও সহানুভূতিশীল আচরণ করেছেন।
কেউ যদি নতুন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার অমুসলিম আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হিমশিম খান অথবা কেউ যদি ভিন্ন ধর্মের সহপাঠী বা সহকর্মীর সঙ্গে কীভাবে মিশবেন তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন—তাহলে নবীর (সা.) জীবনের এই হাদিসগুলো তাদের জন্য দিকনির্দেশনা হতে পারে।
অমুসলিমের সঙ্গে সদাচরণ বিষয়ে রাসুলের (সা.) ৯টি হাদিস এখানে তুলে ধরা হলো—
অমুসলিম আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা
হজরত আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জননী আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী কুতাইলা হুদায়বিয়া সন্ধির পর কাফের অবস্থায় মক্কা থেকে মদীনায় পৌঁছেন। তিনি কন্যা আসমার জন্য কিছু উপঢৌকন সাথে নিয়ে যান। কিন্তু আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা সেই উপঢৌকন গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন ‘আমার জননী আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন, কিন্তু তিনি কাফের। আমি তার সাথে কেমন ব্যবহার করব?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘জননীর সাথে সদ্ব্যবহার কর।’ (বুখারি ও মুসলিম)
শত্রুভাবাপন্ন হলে দোয়া করা
দাওস গোত্র ইসলাম গ্রহণ না করায় সাহাবিরা নবীকে (সা.) তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করতে বললেন। কিন্তু তিনি তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করলেন। দোয়ায় বললেন—‘হে আল্লাহ! দাওস গোত্রকে হেদায়েত দাও।’ (বুখারি)
আরও পড়ুন
উপহার বিনিময়
হজরত ওমর (রা.) একবার মহানবীর (সা.) উপহার দেওয়া একটি রেশমি পোশাক মক্কায় তার এক অমুসলিম ভাইকে পাঠান। নবী (সা.) এতে কোনো আপত্তি করেননি। (বুখারি)
অমুসলিমদের উপহার গ্রহণ
এক ইহুদি নারী নবীজিকে একটি ভেড়া উপহার দেন, যা পরে বিষমাখা প্রমাণিত হয়। তবু তিনি নারীটিকে ক্ষমা করেন। (বুখারি)
অমুসলিমদের অধিকার রক্ষা
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে কেউ কোনো অমুসলিমের অধিকার ক্ষুণ্ন করে, সম্মতি ছাড়া কিছু নেয়, কিয়ামতের দিন আমি তার প্রতিপক্ষ হব।’ (আবু দাউদ)
অমুসলিম হত্যা বড় গুনাহ
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে কেউ কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (বুখারি)
অসুস্থ অমুসলিমকে দেখতে যাওয়া
এক ইহুদি বালক অসুস্থ হলে নবী (সা.) তাকে দেখতে যান। পরে সে ইসলাম গ্রহণ করে। নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর প্রশংসা যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করলেন।’ (বুখারি)
অমুসলিমদের সঙ্গে ব্যবসা
মহানবী (সা.) এক ইহুদির কাছ থেকে খাবার কিনেছিলেন ধার হিসেবে এবং জামানত হিসেবে একটি ঢাল দিয়েছিলেন। (বুখারি ও মুসলিম)
মৃত অমুসলিমের প্রতি সম্মান
এক ইহুদির জানাজার মিছিল অতিক্রম করলে নবী (সা.) দাঁড়িয়ে যান, যতক্ষণ না সেটি চলে যায়। (নাসায়ী)
পবিত্র কোরআনে যা বলা হয়েছে
কোরআনে বলা হয়েছে, দীনের ব্যাপারে (ধর্ম নিয়ে) যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। (আল-মুমতাহিনা : ৮)
অর্থাৎ, যেসব কাফের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কারেও অংশগ্রহণ করেনি, আলোচ্য আয়াতে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার ও ইনসাফ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ন্যায় ও সুবিচার প্রত্যেক কাফেরের সাথেও জরুরি।
অ্যাবাউট ইসলাম অবলম্বনে
এনটি