যে আমলের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ জান্নাতে যাবে
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

একজন মানুষকে বিচার করার ক্ষেত্রে সুন্দর আচার-ব্যবহার ও নেক চরিত্র সাধারণ মানদণ্ডে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ইসলামের মানদণ্ডেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। নবিজি (সা.) উত্তম ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী মুসলমানদের সর্বোত্তম মুসলমান গণ্য করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আপনাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে মানুষের সাথে আচরণের দিক দিয়ে উত্তম। (সহিহ বুখারি: ৩৫৫৯, সহিহ মুসলিম: ২৩২১)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে উত্তম চরিত্রের ব্যক্তিদের পছন্দ করার কথা উল্লেখ করে নবিজি (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি আমার কাছে খুব প্রিয়, যার আচরণ ভালো। (সহিহ বুখারি: ৩৭৫৯)
আরেকটি বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো আচরণের মাধ্যমে দিনে রোজা পালনকারী ও রাতে তাহাজ্জুদগুজারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৯৮)
কিছু হাদিসে হাদিসে উত্তম আচরণ ও চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিদের পূর্ণ ঈমানের অধিকারী বলা হয়েছে। আর উত্তম আচরণ হিসেবে নিজের পরিবার-পরিজন বিশেষত নিজের স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণকে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিই সবচেয়ে পূর্ণ ঈমানের অধিকারী। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ওই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর সাথে আচরণের ক্ষেত্রে উত্তম। (সুনানে তিরমিজি: ১১৬২)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও পরিবার-পরিজনের সাথে সদ্ব্যবহারকারী পূর্ণ ঈমানের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সুনানে তিরমিজি: ২৬১২)
আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, আল্লাহভীতি ও উত্তম আচরণ। আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো, সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে কোন কাজ? তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (অর্থাৎ এ দুটি অঙ্গের গুনাহ) (সুনানে তিরমিজি: ২০০৪)
আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিরা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে থাকবে। আবু উমামা আল-বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ সীমায় একটি ঘর দেওয়ার জন্য জামিন হচ্ছি, যে নিজের অবস্থানে সঠিক হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক-বিবাদ বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে ঠাট্টা করার সময়ও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যার চরিত্র-আচরণ সুন্দর। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮০২)
আব্দুর রহমান ইবনে আবদে রাব্বিল কা’বা থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে পছন্দ করে তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান রাখে এবং অন্যের সাথে এমন ব্যবহার করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। (সহিহ মুসলিম: ১৮৪৪)
এ হাদিসে রাসুল (সা.) মানুষের সাথে আচরণের একটি চমৎকার নীতি আমাদের শিখিয়েছেন। সেটা হলো, মানুষের সাথে এমন আচরণ করুন যে আচরণ আপনি মানুষের কাছে আশা করেন। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করার আগে নিজেকে তার জায়গায় দাঁড় করান এবং চিন্তা করুন একই ব্যবহার আপনি পেলে আপনার কেমন লাগতো। রাসুলের (সা.) এই একটি নির্দেশনা অনুসরণ করলেই আমাদের আচরণ সর্বোত্তম ও আদর্শ হয়ে উঠতে পারে।