প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মুফতি মোহাম্মদ আদনান
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন আমার কাঁধে হাত রেখে বলেন, পৃথিবীতে মুসাফিরের মতো জীবন কাটিয়ে দিও, আর নিজেকে কবরের বাসিন্দা ভেবো। (সহিহ বুখারি: ৬৪১৬)
এই হাদিসে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছোট একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন:
১. মুসাফির সব সময় নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়। একজন মুমিনের উচিত সব সময় নিজের গন্তব্য জান্নাতের খোঁজে থাকা, জান্নাতের পথে এগিয়ে থাকা।
২. একজন মুসাফির যতোটা সম্ভব হালকা পাথেয় সাথে রাখে। ভারি বোঝা এড়িয়ে চলে এবং গন্তব্য ছাড়া কোথাও নিজেকে সুস্থির করে না। একজন মুসলিম যেন এই পৃথিবীকে স্থায়ী বাসস্থান না বানায়। যতটা সম্ভব ঝামেলা মুক্ত থেক ইবাদতের মাধ্যমে এই ক্ষুদ্র সফর শেষ করে জান্নাতের গন্তব্যে পৌছার চেষ্টা করে।
৩. মুসাফির চোখ কান খোলা রেখে তার চারপাশের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে এবং সচেতনভাবে গন্তব্যের দিকে ছুটতে থাকে। অলসতা করে না। একজন মুসলমান সচেতনভাবে বিভিন্ন ধোঁকা থেকে বেঁচে তার গন্তব্য আখেরাতের দিকে ছুটবে। নেক আমলে অলসতা করবে না। কোরআনে অলসতাকে নেফাকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন অলসতার সাথে দাঁড়ায়। (সুরা নিসা: ১৪২)
৪. মুসাফির পথেঘাটে অহেতুক কাজে সময় নষ্ট করে না, যত্রতত্র ঝামেলায় জড়িয়ে বিপদ ডেকে আনে না। একজন মুসলমানেরও উচিত অহেতুক কাজ পরিহার করে সময়কে কাজে লাগানো। কারণ প্রতি সেকেন্ডে তার পথ ফুরিয়ে আসছে। তাই ইচ্ছে করে দুনিয়াবী ঝামেলায় জড়িয়ে আখেরাত ভুলে না বসা। আখেরাত তার গন্তব্য এটা সবসময় মাথায় রাখা।
৫. মুসাফির তার পথ চলায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। কখনো রোদ, বৃষ্টি, ঝড়-তুফান, কখনো ডাকাতের ভয়, কখনো চোখ ধাঁধানো কোনো বস্তুর ধোঁকা। যে মুসাফির সব কিছু মোকাবেলা করে সামনে অগ্রসর হতে পারে, সে নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। একজন মুসলমানের জীবনেও অসংখ্য প্রতিকূলতা আসতে থাকবে। কখনো অর্থনৈতিক সংকট, কখনো পারিবারিক বিবাদ, কখনো প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ আর কখনো সুখ ও সমৃদ্ধির প্রলোভন। কিন্তু এত সবের মধ্যেও হতাশ না হয়ে সে যদি আখেরাতের পথে সামনে অগ্রসর হতে থাকে, পথ না হারায়, তাহলে এক সময় সেও জান্নাতের গন্তব্যে পৌঁছাতে সফল হবে।
এই প্রতিকূলতা মুমিনের জন্য সৌভাগ্যের। হাদিসে এসেছে, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মুসলমান যে কোনো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, আল্লাহ তায়ালা তার বিনিময় দিয়ে থাকেন; এমন কি ছোট কোনো কাঁটা ফুটলেও সে তার প্রতিদান লাভ করে। (সহিহ বুখারি: ৫৬৪০, সহিহ মুসলিম: ২৫৭২)
হাদিসটিতে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেকে কবরের বাসিন্দাও ভাবতে বলেছেন। কবরবাসী থেকে যেমন দুনিয়ার মানুষ নিরাপদ থাকে, একজন মুসলমানেরও এমন হওয়া উচিত যেন সমাজের সব মানুষ তার থেকে নিরাপদ থাকে। যে নিজেকে কবরের বাসিন্দা ভাবে, তার মনের ভেতরে অহংকার ও দাম্ভিকতাও জায়গা পায় না।
আল্লাহর রাসুলের (সা.) এই একটি হাদিসের শিক্ষা যদি আমরা গ্রহণ করি, মেনে চলি, দুনিয়াকে পথ আর জান্নাতকে গন্তব্য ভেবে জীবন পরিচালনা করি, কবরের বাসিন্দার মত অহংকার, লোভ, প্রতিহিংসাসহ যাবতীয় খারাপ স্বভাব ত্যাগ করি, তাহলে এই একটি হাদিসই আমাদের মুক্তির জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
লেখক: খতিব, মকিম বাজার জামে মসজিদ, বংশাল, ঢাকা।