প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫

মানুষ তিন ধরনের স্বপ্ন দেখে। কিছু স্বপ্ন আসে মানুষের কল্পনা থেকে। মানুষ যা ভাবে বা কল্পনা করে সেটাই ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন হয়ে আসে। এ সব স্বপ্ন মানুষ দেখে আবার ভুলে যায়। এগুলোতে বিশেষ কোনো ইশারা বা অর্থ থাকে না। কিছু স্বপ্ন আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে যা সুসংবাদ হিসেবে আসে, ভবিষ্যতের কোনো ঘটনার ইশারা হিসেবে আসে। আর কিছু স্বপ্ন আসে শয়তানের পক্ষ থেকে যা দেখে মানুষ ভয় পায়, আতংকগ্রস্ত হয়।
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, যখন কেয়ামত নিকটবর্তী হবে, তখন বেশিরভাগ সময়ই মুসলমানদের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। আপনাদের মধ্যে সর্বাধিক সত্যভাষী ব্যক্তি সর্বাধিক সত্য স্বপ্ন দেখবে। আর মুসলমানের স্বপ্ন নবুয়তের পঁয়তাল্লিশ ভাগের এক ভাগ। স্বপ্ন তিন প্রকার, ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ হিসেবে আসে। কিছু স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে আসে যা দুশ্চিন্তা বা দুর্ভাবনা তৈরি করে। আর কিছু স্বপ্ন মানুষের নিজের চিন্তা-ভাবনা থেকে তৈরি হয়। (সহিহ মুসলিম: ৫৭০৮)
আল্লাহর নবি হজরত ইউসুফ (আ.) শৈশবে একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিলেন যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুসংবাদ হিসেবে এসেছিল। স্বপ্নে তিনি দেখেন, এগারোটি তারকা, চাঁদ ও সূর্য তাকে সিজদা করছে। স্বপ্নটি দেখে তিনি বিস্মিত হন এবং তার বাবা আল্লাহর নবি ইয়াকুবের (আ.) কাছে স্বপ্নটি বর্ণনা করেন। স্বপ্ন শুনে ইয়াকুব (আ.) ব্যাখ্যা করেন, তিনি পূর্ণ বয়সে পৌঁছে তার বাবা ইয়াকুব দাদা ইসহাক ও পরদাদার ইবরাহিমের (আ.) মতো আল্লাহ তাআলার নবি হবেন।
কোরআনে ইউসুফের (আ.) স্বপ্ন দেখার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন ইউসুফ তার বাবাকে বলল, বাবা, আমি দেখেছি এগারোটি নক্ষত্র, সূর্য ও চাঁদকে, আমি দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়। সে (ইয়াকুব) বলল, তুমি তোমার ভাইদের কাছে তোমার স্বপ্নের ব্যাপারে বোলো না, তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। তোমার রব তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেবেন। আর তোমার ওপর ও ইয়াকুবের পরিবারের ওপর তার নেয়ামত পূর্ণ করবেন যেভাবে তিনি তা পূর্বে পূর্ণ করেছিলেন তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহিম ও ইসহাকের ওপর, নিশ্চয় তোমার রব সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা ইউসুফ: ৪-৬)
হজরত ইয়াকুবের (আ.) বারোজন ছেলে ছিল। তাদের মধ্যে হজরত ইউসুফের (আ.) প্রতি ইয়াকুবের (আ.) মমতা ও স্নেহ বেশি ছিল। এ কারণে অন্যান্য ভাইরা ইউসুফকে ঈর্ষা করতেন। তাই ইয়াকুব (আ.) তার স্বপ্ন ভাইদের বলতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন যেন তাদের ঈর্ষা আরও বেড়ে না যায়।
পরবর্তীতে ইউসুফের (আ.) স্বপ্ন সত্য হয়। আল্লাহ তাআলা তাকে নবুয়্যত দান করেন। মিশরের বাদশাহি দান করেন। তিনি যখন তার পরিবারকে কেনান থেকে মিশরে নিয়ে যান এবং নিজের বাবা-মাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেন, তখন তার এগারো ভাই ও বাবা-মা তাকে সম্মানসূচক সিজদা করেন (সম্মানসূচক সিজদা ওই সময় জায়েজ ছিল, এখন হারাম করা হয়েছে।) যেমন তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন এগারোটি তারকা ও চন্দ্র-সূর্য তাকে সিজদা করছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, সে (ইউসুফ) তার বাবা-মাকে সিংহাসনে ওঠাল এবং তারা সবাই তার সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং সে (ইউসুফ) বলল, হে আমার পিতা, এই হল আমার আগে দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা, আমার রব তা বাস্তবে পরিণত করেছেন আর তিনি আমার ওপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন আমাকে জেলখানা থেকে বের করেছেন এবং শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করার পর তোমাদের গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন। নিশ্চয় আমার রব যা ইচ্ছা করেন, তা বাস্তবায়নে তিনি সূক্ষ্মদর্শী। নিশ্চয় তিনি সম্যক জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা ইউসুফ: ১০০)