বাংলাদেশ প্রস্তুত, এশিয়া কাপ প্রস্তুত তো বাংলাদেশকে বরণে?
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

যদিও দু’দিন আগেই বেজেছে উঠেছে দামামা। তবে সে উৎসব এখনো পুরোপুরি ছুঁয়নি বাংলাদেশকে। যদিও আর দেরি নেই, কেবল কিছু ঘন্টার অপেক্ষা, এরপরই
গোটা দেশ মেতে উঠবে একই আমেজে, একই উৎসবে। পাওয়া না পাওয়ার ভিড়ে উত্তেজনা আর শিহরণে প্রস্তুত সবে। প্রস্তুত এশিয়ার ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের মহারণে বাংলাদেশকে বরণে।
বরণ তো হবেই, ফাঁকেতে চলুন না দেখে আসি অতীতটা, পড়ে দেখি ইতিহাসের পাতা। দেখি কার নাম আছে লেখা, কারা গড়লো অপার সব কীর্তিগাঁথা। দল হিসেবেই বাংলাদেশই বা দৌঁড়ালো কতটা...
এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মহারণে বাংলাদেশের অধ্যায়টা লেখা বেদনাবিধুর নীল রঙে। স্বপ্ন ভঙ্গের এই গল্পগুলো লেখা যায় ব্যথাতুর কালো কালিতেও। প্রেমিকার হাত ছুঁতে গিয়েও যেন ছোঁয়া হয়নি, খুব কাছে গিয়েও লাল গোলাপটা আর পাওয়া হয়নি।
হারানো দিনের ধূসর কালো মলিন অধ্যায়গুলো বাদ দিলেও এই দশকের গল্পে শেষ পাঁচ আসরে তিন-তিনবার ফাইনাল খেলেও শিরোপা আর আমাদের হয়নি, অশ্রুসিক্ত চোখে শুধুই নির্বাক চাহনি।
শেষ ৫ আসরের তিনবার আশা জাগিয়ে, স্বপ্ন দেখিয়ে, স্বপ্নতেই শেষ। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিব-মুশফিকের সেই অশ্রুভেজা চোখ এখনো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়, আফসোসে হতাশায় ডুবায়।
২০১৬ সালে শেরে বাংলাতে শিহরণ জাগিয়েও জিততে পারেনি বাংলাদেশ, ঘরের মাঠে হেরে যায় ভারতের কাছে। আর ২০১৮ এশিয়া কাপও আক্ষেপে পোড়ায়, এবারো ভারতের কাছেই শিরোপা হাতছাড়া হয়।
এশিয়া কাপে ১৬ আসরে ১৪ জন টুর্নামেন্ট সেরা দেখেছে বিশ্ব। দু’জন টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন একাধিকবার, অর্জুনা রানাতুঙ্গা আর নভ্যুজিত সিং সিধ্যু নাম তার। যাহোক, সুরিন্দর খান্নায় তালিকার শুরু, কূলদীপ যাদবে সমাপ্তি। মাঝের গল্পে লাল-সবুজের কালিতে দু’টি নাম বাংলাদেশের প্রাপ্তি।
বাঙলীর অশ্রুসিক্ত ২০১২ সালের আসরটা ছিলো সাকিবময়। ২৩৭ রান ও ৬ উইকেট নিয়ে প্রথম বাঙালী হিসেবে নাম লেখান এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মহারণে সর্বসেরা সেনাপতি হিসেবে। আর ফের ২০১৬ সালে সাব্বির রহমান সেই তালিকায় নাম লিখেন লাল-সবুজের কালিতে।
ম্যান অফ দ্য ফাইনাল হবার কীর্তি আছে লিটন দাসের, মুস্তাফিজও তালিকায় আছেন এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের। এক অম্লান কীর্তি আছে তামিম ইকবালের, টানা চার ম্যাচে অর্ধশতক এই ড্যাশিং ওপেনারের।
এত গেল প্রাপ্তি, এবার লজ্জাতে ফিরি। দলীয় সর্বোচ্চ ৩৮৫ রান পাকিস্তানের, প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। আবার ওয়ানডে এশিয়া কাপে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে অল আউট হবার লজ্জাটাও আমাদের, ৮৭ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ।
সর্বোচ্চ ডাক তথা শূণ্য রানের তালিকায়ও আছে দুই বাঙালী, সমান ৪ শূন্য নিয়ে রুবেল হোসেনের সাথে আমিনুল ইসলাম শীর্ষস্থানধারী। আরো একটা লজ্জা আছে, লজ্জাটা মাশরাফীকে ঘিরে। তিনবার শূন্য রানে ফেরেন তিনি একই আসরে।
শুধুই দল আর ক্রিকেটার নয়, আরো কীর্তি আছে বাংলাদেশের নামের পাশে। ভারতীয়দের ক্রিকেট ইশ্বর, কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার তার শততম শতক করেছিলেন এই বাংলাদেশেরই বিপক্ষে।
এশিয়া কাপে একটা হ্যাট্রিকও আছে বাংলাদেশের, এশিয়া কাপের আয়োজক টানা তিন আসরের। আবার সব মিলিয়ে ৫ আসর আয়োজন করে শীর্ষ আয়োজক দেশও বাংলাদেশ।
এবারের আসর দু’দিন আগে শুরু হলেও আজই প্রথম মাঠে নামছে টিম বাংলাদেশ। শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে দলটি লড়াই করবে লিটন দাসের নেতৃত্বে। প্রথমবারের মতো বড় কোনো আসরে অধিনায়কত্ব করতে যাচ্ছেন তিনি।
সমর্থকরাও তাই আশায় বুক বেঁধেছে, প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে অধিনায়কত্ব করা লিটনের নেতৃত্বে টাইগাররা ঘরে ফিরবে প্রথমবার শিরোপা জিতে। লিটন দাসও শুনিয়েছেন সেই গল্পই, বলেছেন প্রস্তুত ইতিহাস গড়তে।
আসর শুরু দিনেই টাইগার অধিনায়ক হুংকার দিয়েছেন, বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আমরা এশিয়া কাপের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত। খেলাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি। এখনো যদিও (শিরোপার) স্বাদ পাইনি। তবে সেটা এখন ইতিহাস। আর ইতিহাস তৈরি হয় ইতিহাসকে ভাঙার জন্য।’
আরও পড়ুন