প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানুর রহমান সামার অ্যাথলেটিকস দিয়ে ঘরোয়া আসরে ফিরেই বাজিমাত করলেন। জাতীয় স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে শুক্রবার ১০ দশমিক ৬৪ সেকেন্ড টাইমিং করে তিনি সেরা হয়েছেন। বাংলাদেশ নৌবাহনীর হয়ে দৌড়ান ইমরানুর। দ্বিতীয় হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আব্দুল মোতালেব। ১০০ মিটারে ১০ দশমিক ৮৬ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন তিনি। অনেক বিতর্কের পর মেয়েদের ১০০ মিটারে সেরার মুকুট ফিরে পেয়েছেন সুমাইয়া দেওয়ান। তিনি ১২ দশমিক ১৯ সেকেন্ড টাইমিং করে দ্রুততম মানবীর মুকুট পরলেন। জাতীয় অ্যাথলেটিকসের সেরা শিরিন আক্তার হয়েছেন দ্বিতীয়। ১০০ মিটার দৌড়াতে তিনি ১২ দশমিক ২১ সেকেন্ড সময় নেন।
তবে সুমাইয়া নাকি শিরিন আক্তার—কে প্রথম, এ নিয়ে প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এই ফল মানতে নারাজ শিরিন, ‘আমি স্পষ্টভাবে প্রথম হয়েছি। আগে ফিনিশিং করেছি। ফটোফিনিশিং দেখার অধিকার অ্যাথলেটের রয়েছে। আমি সেটা দেখতে চাই।’ শিরিন তার সংস্থা নৌবাহিনীর কোচ ও কর্মকর্তাকে নিয়ে ফটোফিনিশিংয়ের সামনে যান। সেখানে বিচারকদের পাশাপাশি ফেডারেশন সেক্রেটারি শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন। ফেডারেশন সেক্রেটারি শিরিনের উদ্দেশে বলেন, ‘আগে ফল ঘোষণা হবে, কারও আপত্তি থাকলে সেটা পরে দেখা যাবে।’
১০০ মিটারের ঘরোয়া স্প্রিন্টে ইমরানুরের সাফল্য নতুন নয়। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় এ নিয়ে ১০০ মিটারে পঞ্চমবার সেরা হলেন তিনি। আর ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ১০০ মিটারে সেরা হয়েছিলেন সুমাইয়া। শুক্রবার মুকুট ফিরে পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমি পরিশ্রম করে আবার আগের জায়গায় আসতে পেরেছি। প্রথম ধন্যবাদ জানাতে চাই নৌবাহিনী, বিকেএসপি, আমার কোচ ও পরিবারকে, যারা আমার পাশে ছিল। আমার পরিশ্রম সফল হয়েছে। সামনে আরও কঠোর পরিশ্রম করে এগিয়ে যেতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম এবার আমি প্রথম হবো। আলহামদুলিল্লাহ তাই হয়েছি। সামনে এসএ গেমসে অবশ্যই ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। বাংলাদেশকে ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’ শিরিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে সুমাইয়া বলেন, ‘আমাকে দেখে নতুন যারা আসছে, তারা শিখবে, চেষ্টা করবে এই জায়গায় পৌঁছাতে। আমার দুর্বলতা ছিল ফিনিশিংয়ে, সেটা নিয়ে কোচের সঙ্গে কাজ করেছি। এখন আমি বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী। আপনারা দোয়া করবেন। এসএ গেমসে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছেন সুমাইয়া। তিনি আরও বলেন, ‘আজকের টাইমিংটা (১২.১৯৫) আমার জন্য খুব সন্তোষজনক। দৌড় শেষে আমি নিজেও ধরে নিয়েছিলাম প্রথম হয়েছি। যদি ফল অন্যরকম আসত, আমি অবশ্যই চ্যালেঞ্জ করতাম।’
১০০ মিটারের দ্রুততম মানব দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ইতিহাস গড়তে চান। ইমরানুর বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি নৌবাহিনীর জন্য জিতেছি। তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছে। আমার ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিয়েছে। গত জানুয়ারিতে দৌড়ানোর জন্য তারা আমাকে কোনো চাপ দেয়নি, যেটা আমি মনে করি, তাদের উদারতা। আপনারা জানেন, প্যারিস অলিম্পিকের পরের সময়টা আমার জন্য কঠিন ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘চোটেও পড়েছিলাম। অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। ছয়-আট মাস বাইরে ছিলাম। আমি হাঁটতে পারিনি, জগিং করতে পারিনি। ওই সময় নিজেকেই জিজ্ঞেস করতাম, কবে আবার দৌড়াতে পারব? মনে সন্দেহ জাগত, আদৌ আর দৌড়াতে পারব কি না? শরীর কি সবকিছু সয়ে নিতে পারবে? তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমি আবার দৌড়ানোর সুযোগ পেয়েছি, যেটা অসাধারণ অনুভূতির।’ ৩২ বছর বয়সী ইমরানুরের ভাবনাজুড়ে সামনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলো। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আমার ফিরে আসার দৌড়। আমি শুধু চেয়েছি ঠিকঠাকভাবে দৌড়টা শেষ করতে। টাইমিং, জয়—এগুলো আমার ভাবনায় খুব একটা ছিল না। শুধু চেয়েছিলাম ভালোভাবে দৌড় শেষ করতে। অবশ্যই সামনে বেশকিছু ইভেন্ট আছে। ইসলামিক গেমস আছে, সাউথ এশিয়ান গেমস আছে। তবে আমি ধাপে ধাপে এগোতে চাই। আবার অনুশীলন শুরু করব, যে ট্রেনিংগুলো করতে পারিনি চোটের সময়, সেগুলোর দিকে মনোনিবেশ করব। কেননা, আমি অনুভব করছি, আমি এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নই। অবশ্যই আমাদের মূল লক্ষ্য সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণ জেতা। ইনশাআল্লাহ। দেশের সবার, নৌবাহিনীর এবং ফেডারেশনের সমর্থন, যেটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ; এগুলো পেরে আমি নিশ্চিত—সাউথ এশিয়ান গেমসে আমরা ইতিহাস গড়তে পারি।’
আরও পড়ুন